পর্বঃ৬
#আবির হাসান নিলয়
ক্লাস শেষ করে বাইরে এসে বন্ধুদের সাথে কথা
বলছি তখনি জান্নাত আসলো।
জান্নাতঃএখন চলো
জয়ঃকোথায় যাবে?
জান্নাতঃবাসায় যাবো আমরা
আমিঃতুমি যাও আমি পরে চলে যাবো
জান্নাতঃকি করবে তুমি এখানে?
আমিঃএখানে না,আড্ডাখানায় যাবো
জান্নাতঃসেটা তো হচ্ছে না প্রিয়।চলো এখন
আমিঃতুমি একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি
জান্নাতঃঠিক আছে আমি মামির সাথে কথা বলে
একটু পরে আসছি
আমিঃঠিক আছে।
জান্নাত চলে যাওয়ার পর পুনরায় আড্ডা দিতে
লাগলাম।
রাফিঃভাই কাহিনী কি রে?
আমিঃকাহিনী কিছুই না।
রাফিঃতাহলে জান্নাত যে বলল..!
আমিঃহুম,আমরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসি
রাত্রিঃকি বলিস এসব,সত্যি..?
আমিঃহুম😁
রাত্রিঃহারামি ভালোই তো পাড়িস। মাত্র কয়েকদিন
আসতেই জান্নাতকে পটিয়ে ফেলছিস।
আমিঃমেয়ে আগে থেকেই পটে ছিলো আমি তো
শুধু তাল মিলিয়েছি।
জয়ঃহুম ভালোই
রাত্রিঃতা ট্রিট দিবি কবে?
আমিঃআমার হয়ে জান্নাত দিয়ে দিবে
রাত্রিঃজান্নাত দিবে কেনো?
আমিঃআমার কাছে টাকা নাই তাই
রাহুলঃসালা ফকির
আমিঃহাহাহা
সবার সাথে আরো কিছু সময় কথা বলার পর
কোথা থেকে জেনো জান্নাত এসে হাত ধরে
কলেজের বাইরে নিয়ে আসলো।
আমিঃকি হলো এভাবে টানছো কেনো?
জান্নাতঃতোকে বলছি না কোনো মেয়ের সাথে
কথা বলবি না
আমিঃআমি আবার কখন মেয়েদের সাথে কথা
বললাম বলবে?
জান্নাতঃতোদের সাথে ঐ তিনটা মেয়ে কেনো?
আমিঃওরা আমাদের ফ্রেন্ড আর কিছু না।
জান্নাতঃকই আমার তো কোনো ছেলে ফ্রেন্ড নাই
আমিঃতোমার নেই সেটার জন্য আমি কি করবো
জান্নাতঃতোমারও থাকা যাবেনা
আমিঃহঠাৎ করেই ওদের সাথে কথা বলা বন্ধ
করলে কি ভাববে বুঝতে পারছো।
জান্নাতঃআমি এসব জানতে চাই না
আমিঃওকে কাল থেকে তুমি এবং তোমার বন্ধুরা
আমাদের সাথে আড্ডা দিবে
জান্নাতঃবাট তুমি অন্য কারো দিকে তাকাতে
পাড়বে না বলে দিলাম।
আমিঃআমি তো তোমাকেই দেখবো জানু
জান্নাতঃমনে থাকে জেনো
আমিঃহুম থাকবে।এখন বাসায় যায়
জান্নাতঃহুম চলো।
তারপর দুজন একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে
আসলাম।কেউ একজন ঠিকি বলেছিলো,সহজ
সরল মেয়েদের রাগ, অভিমান অনেক বেশি।
বাসার সামনে আসতেই দুজন নেমে গেলাম।
জান্নাতঃএখন রিক্সা ভাড়া দাও
আমিঃতুমি থাকতে আমি কেনো দেবো?
জান্নাতঃআমি বলছি তাই
আমিঃআমি শুধু আমারটা দিবো
জান্নাতঃআর আমারটা কে দেবে?
আমিঃতুমি দিবা
জান্নাতঃসকালে আমি দিয়েছি এখন তুমি দিবা
আমিঃআমার কাছে ওতো টাকা নেই
জান্নাতঃতোমার ওয়ালেট বের করো
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃআমি দেখবো
আমিঃআমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না?
জান্নাতঃএকদম না,বের করো বলছি
আমিঃপারবো না
জান্নাতঃওকে আমিই বের করছি
একধরনের জোড় করে ওয়ালেট বের করলো।
জান্নাতঃইশশশ এতো গুলো টাকা রেখে বলছে
উনার টাকা নেই।
আমিঃএগুলো দিয়ে কিছু কিনতে হবে
জান্নাতঃতোমার যখন যেটা কিনতে হবে আমাকে
বলবে।আমি তোমার সাথে গিয়ে কিনে দিবো।বাট
আমি যখন টাকা চাইবো তখন তোমার দিতে হবে।
এই মামা এই নাও তোমার ভাড়া
রিক্সাঃজ্বি দেন
ভাড়া দিয়ে দুজন উপরে আসতে লাগলাম।
জান্নাতঃআমার বাবুতা রাগ করছে বুঝি
আমিঃহু
জান্নাতঃতুমি কি কিনবে বলছিলে?
আমিঃআরে বাদ দাও,আমি এমনি তোমার সাথে
মজা করছিলাম।
জান্নাতঃসত্যি মজাই তো?
আমিঃহুম ডার্লিং।আজ রাতে শাড়ি পড়তে পাড়বে
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃশুধু দেখবো
জান্নাতঃবাসা আসবো পড়ে?
আমিঃনা,ডিনার শেষ করে ছাদে যাবে
জান্নাতঃঠিক আছে জান।এখন বাসায় চলে আসছি
আমিঃহুম বাই
জান্নাতঃবাই
জান্নাতকে বিদায় দিয়ে বাসায় এসে ফ্রেস হওয়ার
পর লাঞ্চ করে ঘুমিয়ে গেলাম।
---------------------------------------------
জান্নাতের কথা,,,,,
নিলয়কে বিদায় দিয়ে বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে
হালকা লাঞ্চ করে টেলিভিশনের সামনে বসে
রবীন্দ্র সংগীত, “আমারো পড়ানো যাহা চাই”
বার বার একই গান শুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।মাঝে
মাঝে নিজেও গানের সাথে তাল মিলিয়ে নিজের
সুরে গান গেয়ে চলেছে।সোফার থেকে বালিশ
নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভাবতে শুরু করে,,
পাগলটা যে শাড়ি পড়তে বলল সেটার কি হবে।
আলমারিতে অনেক শাড়িই আছে,কিন্তু কোনটা
পড়লে আমাকে ওর কাছে ভালো লাগবে।আমি
নিজেই কতো বোকা,একবারও ওর কাছে জানতে
চাইলাম না কোন কালারের শাড়ি পড়বো। কিন্তু
গাধাটা তো বলতে পারতো,জান্নাত তুমি এই
কালারের শাড়ি পড়লে অনেক সুন্দর দেখাবে।
এখন ওর সামনে শাড়ি পড়ে গেলে যদি বলে
আমাকে মানাচ্ছে না।তখন কি হবে...!ধুর যা
হওয়ার হবে গাধাটা বললেই পাড়তো।ও যেহেতু
বলেনি তাহলে আমি কেনো এতো ভাবছি।
মাথা থেকে সব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে নতুন
একটা গান,“এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন
হতো তুমি বলতো”শুনতে লাগলো।জান্নাতের বাবা
বাসায় নেই।কাজের জন্য অন্য বাসায় গেছেন।
এদিকে বেচারি গান শুনতে শুনতে সোফার উপরেই
ঘুমিয়ে গেছে।
নিলয়ের কথা,,,,,,
সন্ধ্যার সময় ঘুম থেকে উঠে আলমারিতে নীল
পাঞ্জাবী খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু কোথাও আমার
পছন্দের সেই পাঞ্জাবী পেলাম না।আম্মুকে ডাক
দিয়ে পাঞ্জাবির কথা বললাম,,,
আমিঃআম্মু রুমে আসো তাড়াতাড়ি
আম্মুঃকেনো কি হয়েছে(রুমে এসে)
আমিঃআমার নীল পাঞ্জাবি কোথায়?
আম্মুঃবেশি তাড়াহুড়ো করার জন্য সব কিছু
আনা হয়নি,হয়তো তোর পাঞ্জাবীটাও আনা হয়নি
আমিঃআম্মু ওটা আমার ফেভারিট পাঞ্জাবী
আম্মুঃজানি আমি,আর কি করবো তুই বল।এতো
তাড়াতাড়ি করতে কি সব মনে থাকে?
আমিঃতাহলে এখন কি হবে?
জান্নাতঃকি হবে,আর তুই পাঞ্জাবি পরিধান কোথায়
বের হবি শুনি?
আমিঃতোমার না জানলেও চলবে।
আম্মুঃনা বললে আমারও ঠেকা নেই
আমিঃধুর, যাও এখন
আম্মুঃকাল টাকা দিয়ে দিবো কিনে আনিস
আমিঃহুম
আম্মু রুম থেকে চলে যাওয়ার পর কোনো উপায়
না পেয়ে আলমারি থেকে হলুদ কালারের পাঞ্জাবি
পড়তে হলো।যদিও পড়তে ইচ্ছা করছিলো না
কিন্তু জান্নাতের কথা ভেবে পড়তে হলো।বাসায়
কাউকে কিছু না বলে ছাদে চলে আসলাম।জান্নাত
এখনো ছাদে আসেনি।তাই একাকীত্ব হয়ে ছাদে
হাটতে লাগলাম।প্রতিদিনের থেকে চাঁদের আলো
অনেকটা বেশিই উজ্জীবিত। অন্ধকার পৃথিবীকে
চাঁদের আলো দিয়ে নতুন করে নির্মিত করছে।
কিছুটা সময় ভাবনার মাঝেই পাড় করলাম।
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম কেউ ছাদের গেট ধরে নাড়াচাড়া
করছে।কিছুটা কাছে আসতেই বুঝতে পাড়লাম
এটা আর কেউ না স্বয়ং জান্নাত নিজেই।কিন্তু
পেত্নীটা এটা কি পড়ে আসছে...!
জান্নাতঃআরে বাহ তুমিও হলুদ কালারের ড্রেস
পড়ে আসছো?
আমিঃহুম বাট তুমি এটা পড়তে গেলে কেনো?
জান্নাতঃভালোই তো হয়েছে।তোমার হলুদ পাঞ্জাবি
আর আমার হলুদ শাড়ি।
আমিঃকিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম নীল শাড়ি
পড়ে আসবে।
জান্নাতঃইচ্ছা ছিলো কিন্তু পড়তে পারিনি
আমিঃহাহাহা,আমার মতো তোমারটাও হারিয়ে গেছে?
জান্নাতঃআলমারি খুলতেই আম্মুর হাজার সৃতি
চোখের সামনে ভেসে ওঠে।ছোট বেলা থেকেই
আম্মু আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিতো।যখন আমি
ক্লাস নাইনে পড়ি তখনি আম্মু আমাকে ছেড়ে
দূর আকাশে চলে যায়।তুমি জানতে চেয়েছিলে না,
কেনো আমি এই বাসায় থাকি।উত্তর হলো,আম্মুর
সৃতি।এই বাসার প্রতিটা জিনিষের উপর আম্মুর
স্পর্শ খুঁজে পাই।আম্মু প্রায়ই হলুদ শাড়ি পড়তেন।
আলমারির একটা তাক ধরে শুধু হলুদ শাড়ি
দিয়েই পরিপূর্ণ। আজ আম্মুকে অনেক বেশিই
মনে পড়ছিলো।
কথাগুলোর মাঝে অনেকদিনের কষ্ট পুষে রাখা
বের হচ্ছিলো।কথার কণ্ঠস্বর অনেকটা ভারি হয়ে
এসেছে।চাঁদের আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো
জান্নাতের চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে।
হাত দিয়ে জান্নাতের চোখের পানি মুছে দিয়ে
শক্ত করে বাহুডোরে আটকে নিলাম।
আমিঃএকদম কান্না করে না,আর অনেক মায়াবতী
লাগছে আমার পেত্নীটাকে।
জান্নাতঃপেত্নী বুঝি মায়াবতী হয়?
আমিঃসবাই না শুধু তুমিই
জান্নাতঃতোমাকেও সুন্দর লাগছে সাথে হিমুর
কবিতার মতো রোমান্টিক লাগছে।
আমিঃতাই বুঝি
জান্নাতঃহুম।চলো দোলনায় বসি
আমিঃঠিক আছে(দোলনায় বসলাম)
জান্নাতঃএই নাও(টিফিন বক্স দিয়ে)
আমিঃকি আছে এটার মাঝে?
জান্নাতঃতোমার প্রিয় বিরিয়ানি
আমিঃতুমি জানলে কি করে আমার বিরিয়ানি প্রিয়
জান্নাতঃআম্মুর থেকে শুনেছি।
আমিঃওহ,চলো খেয়ে নেই আগে
জান্নাতঃউহু,পরে খাবো
আমিঃহুম
জান্নাতের কোলে মাথা রেখে দুজন কথা বলতে
লাগলাম।অনেক বেশিই মায়াবী লাগছে জান্নাতকে।
খুব করে ইচ্ছা করছিলো জান্নাতের আম্মুর কথা
শুনতে কিন্তু মন খারাপ করবে ভেবে বলার সাহস
পেলাম না।সিদ্ধান্ত নিলাম জান্নাতের আব্বুর
থেকে জেনে নিবো।
আমিঃজান্নাত....(দু গাল ধরে)
জান্নাতঃহুম বলো
আমিঃএতো ভালো কেনো তুমি?
জান্নাতঃকে বলছে?
আমিঃআমি নিজেই বলছি
জান্নাতঃতুমি ভালো বললেই কি ভালো হওয়া যায়?
আমিঃঅন্য সবার কাছে ভালো হয়ে তোমার কোনো
লাভ নেই।তুমি আমার কাছে ভালো এটাই অনেক
জান্নাতঃহুম
------------------------------------------------------
দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলতে লাগলাম,,,,
জান্নাতঃঅনেক তো হলো এবার খাবার খেয়ে নাও
আমিঃতুমি খাইয়ে দাও
জান্নাতঃআমি পারবোনা
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃকারণ,তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে
আমিঃজ্বি না প্রেয়সী,তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে
জান্নাতঃপ্রেয়সী আমাকে বললে?
আমিঃতুমি ছাড়া আর কাকে বলবো?
জান্নাতঃসেটা তুমিই ভালো জানো।
আমিঃএতো জানাজানির কিছু নেই।এখন খাইয়ে
দাও তো,অনেক ক্ষুধা পেয়েছে।
জান্নাতঃতুমি ওঠো আমি নিচ থেকে পানি আনছি
আমিঃঠিক আছে।
জান্নাত সেখানে বসে না থেকে পানির জন্য নিচে
চলে যেতেই ফোনে একটা কল আসলো।পকেট
থেকে বের করে দেখলাম বৃষ্টি কল করেছে,,,
আমিঃহ্যা বল
বৃষ্টিঃকি করছিস?
আমিঃবসে আছি।বাসার সবাই কেমন আছেন?
বৃষ্টিঃনানু একটু অসুস্থ।
আমিঃকোথায় এখন?
বৃষ্টিঃহাসপাতালে আছেন
আমিঃতুই কোথায় আছিস?
বৃষ্টিঃবাসায় আছি
আমিঃদেখা করতে যাস নাই?
বৃষ্টিঃসন্ধ্যায় সেখান থেকেই আসছি।
আমিঃওহহহ
বৃষ্টিঃতুই আসবি না
আমিঃএখনো সব গোছানো হয়নি।সবকিছু গুছিয়ে
দেখা করতে যাবো
বৃষ্টিঃহুম,পড়াশোনার কি খবর?
আমিঃআচ্ছা এখন আমি রাখছি(জান্নাত আসছে)
বৃষ্টিঃকেনো?
আমিঃপরে বলবো বাই
বৃষ্টিঃহুম বাই
জান্নাতের সামনে কোনো মেয়ের সাথে কথা বললে
আমি শিওর ও সন্দেহ করবে।হোক সেটা বন্ধু
বা অন্য কিছু।কল কেটে দিয়ে ফোনটা পকেটে
তুলে নিলাম।জান্নাত আমার পাশে এসে বসে
বিরিয়ানির বক্সটা হাতে নিলো।
জান্নাতঃহু এখন হা করো
আমিঃহুম দাও
চাঁদের আলোয় খোলা ছাদের উপর প্রিয় মানুষটার
হাতে খাবার খেতে এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি
হতে শুরু করলো।
আমিঃজান্নাত চশমা কেনো পড়ো?
জান্নাতঃএটা আমার চশমা না
আমিঃতাহলে?
জান্নাতঃআম্মুর চশমা,হা করো
আমিঃহুম,তাহলে তুমি পড়ো কেনো?
জান্নাতঃতখনি তো বললাম আম্মুর সৃতিকে
সব সময় আগলে রাখতে চাই
আমিঃওহ
জান্নাত আমাকে খাইয়ে দেয়ার মাঝে মাঝে নিজেও
খেতে লাগলো।খাবার শেষ করে আরো কিছু
সময় চাঁদনী রাতে প্রেম করার পর দুজন ছাদ থেকে
নেমে আসলাম।জান্নাতকে রুমে শুইয়ে দিয়ে
কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বাসায়
এসে কিছু সময় ঈশানের সাথে কথা বলার পর
ঘুমিয়ে গেলাম।
চলবে...................
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন