পর্বঃ৭
#আবির হাসান নিলয়
দিন গুলো এভাবেই যাচ্ছিলো।জান্নাতের সাথে
আমার ভালোবাসার সম্পর্ক অনেক বেশিই মজবুত
হয়ে গেছে।একজন আরেকজনকে ছাড়া এক মুহূর্ত
চিন্তা করতে পারিনা।আব্বু আম্মুকে এখনো কিছু
বলিনি।তবে উনাদের আচরণ দেখে স্পষ্ট বোঝা
যায় উনারা আমাদের সম্পর্ক জেনে গেছেন। আর
জান্নাতের বাবা,,তিনি তো অনেক আগেই জেনেছে।
আর কিছুদিন পর থেকেই টেস্ট এক্সাম শুরু হবে।
বিকেলবেলা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায়
আসার পথে জান্নাতের আব্বু মানে হবু শ্বশুরের
সাথে দেখা....উনাকে দেখেই সালাম দিলাম,,,
আঙ্কেলঃতো কি অবস্থা?
আমিঃজ্বি সব ভালো।
আঙ্কেলঃকিছুদিন পর থেকেই শুনছি টেস্ট এক্সাম
আমিঃহুম ১ সপ্তাহ পর থেকেই শুরু হবে
আঙ্কেলঃপ্রস্তুতি কেমন নিচ্ছো?
আমিঃজি ভালো
আঙ্কেলঃগুড
আমিঃআঙ্কেল কিছু মনে না করলে একটা কথা
জিজ্ঞাস করি?
আঙ্কেলঃমনে করার কি আছে,বলো
আমিঃআমি আসলে আন্টির কথা জানতে চাইছি।
যদি বলতেন উনি কিভাবে.....
আঙ্কেলঃজান্নাত কিছু বলেনি?
আমিঃশুনতে চাইনি কখনো যদি মন খারাপ করে
আঙ্কেলঃব্রেন টিউমার হয়েছিলো।অনেক ডক্টর
দেখিয়েছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।সব ডক্টর
বলতো,স্যার এমন জায়গা টিউমার হয়েছে যেটা
আমরা চাইলেও অপারেশন করতে পারবোনা।
যদিও আমরা করি তাহলে তিনি অপারেশন
সেকশনেই মারা যেতে পারে।তবুও হাল ছারিনি,
দেশ বিদেশের অনেক বড় বড় চিকিৎসকদের
দেখিয়েছি। কিন্তু বার বার সবার মুখ থেকে একই
কথা শুনতে হতো।একদিন জান্নাতের মা আমাকে
বলে,“অনেক তো হলো।আমি জানি আমি আর
বাচবো না।আমার মেয়েটা যেভাবে থাকতে চাই
সেভাবেই ওকে রেখো। কখনো কষ্ট দিও না।”
জান্নাত তখন ক্লাস নাইনে পড়ে।ওর মা ওকে কাছে
টেনে নিয়ে জান্নাতকে শেষ বারের মতো শাড়ি
পড়িয়ে দিয়ে বলে,“মা আমাকে কথা দে কখনো
বাজে মেয়েদের মতো বিগড়ে যাবি না”?জান্নাত
তখন মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারেনি।কান্না করতো
মেয়েটা।সেদিন অনেক কথা বলেছিলাম আমরা।
কিন্তু তার পরেরদিনই আমাদের রেখে ও চলে
যায়।জান্নাত সেদিন ওকে কথা দিতে পারেনি।
তবে সেই কথা মনে রেখেছে,তাই তো মেয়েটা
এখনো সহজ সরল ভাবেই জীবনযাপন করে।
বাবা আমাকে কথা দাও কখনো আমার মেয়েকে
কষ্ট দিবে না?
আমিঃআমাকে ভরসা করুণ,আমি বিনা কারণে
জান্নাতকে ফুলের টোকাও লাগতে দিবো না।
আঙ্কেলঃতোমার প্রতি আমার আস্থা আছে বাবা
আমিঃএখন চলুন বাসায় যায়
আঙ্কেলঃহ্যা চলো
দুজন কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসলাম।
পরেরদিন,,,,,,,,
ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে আসলাম।
আমিঃআম্মু আজ জান্নাত আসেনি
আম্মুঃআসছিলো।তোকে রেডি হয়ে ওর বাসায়
যেতে বলেছে।
আমিঃওহ
নিলুঃভাইয়া ভাবি সরি সরি আপু বলছে আমাকেও
সাথে নিয়ে যেতে।
আমিঃতুই কেনো যাবি?
নিলুঃআব্বুর আজ ছুটি তাই বললো আমাকে স্কুলে
নামিয়ে দিয়ে তোরা দুজন আবার কলেজে যাবি
আমিঃওহ,খেয়ে রেডি হয়ে থাক
নিলুঃওকে
---------------------------------------------------------
নাস্তা শেষ করে জান্নাতদের বাসায় গেলাম।বাইরে
আঙ্কেল বসে ছিলো তাই জান্নাতের কথা জিজ্ঞাস
করতে হলো,,,,
আমিঃআঙ্কেল জান্নাত কোথায়?
আঙ্কেলঃওর রুমে আছে।
আমিঃঠিক আছে
একটু মানবতা দেখানোর জন্যই জিজ্ঞাস করলাম।
উনি না থাকলে কখন গিয়ে রুমে ডুকে যেতাম।।
আঙ্কেলের থেকে এসে জান্নাতের রুমে এসে
দেখলাম আয়নার সামনে বসে চুলগুলো ঠিক
করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।দরজা আটকিয়ে দিয়ে
কোনো কথা না বলে পেছন থেকে পাগলিটাকে
নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলাম।আচমকা
এমন করাতে অনেকটা ভয় পেয়ে গেলেও পরে
ঠিকি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
জান্নাতঃকি ব্যাপার এতো রোমান্টিক.....!
আমিঃআমি এমনিতেই রোমান্টিক বাবু
জান্নাতঃহু সেটা তো জানিই আর বলতে হবে না।
এখন ছাড়ো বাইরে আব্বু বসে আছে।
আমিঃতাতে কি,আর তাছাড়া উনি আসবেন না
জান্নাতঃতুমি গ্যারান্টি?
আমিঃনা,তোমার রুমের দরজা গ্যারান্টি
জান্নাতঃহাহাহা,পাগল।দরজা আটকানোর কি আছে?
আমিঃআটকিয়েছি বলেই জড়িয়ে ধরে আছি
জান্নাতঃঅনেক হয়েছে ছাড়ো।
আমিঃরেডি হওয়া শেষ?
জান্নাতঃঅনেক আগেই,শুধু চুলগুলো ঠিক করছিলাম।
আমিঃতাহলে বের হই?
জান্নাতঃহ্যা চলো।
রুম থেকে বের হয়ে জান্নাতের আব্বুকে বিদায়
দিয়ে চলে আসলাম।
আমাদের ফ্লোরে আসতেই জান্নাত টান দিয়ে বাসায়
নিয়ে গেলো।
জান্নাতঃবই আর নিলুকে নিয়ে যেতে ভুলে গেছো
বুঝি(ফিসফিস করে বলল)
আমিঃতুমি কাছে থাকলে সব ভুলেই যায়
জান্নাতঃহয়েছে আর ঢং করতে হবে না।আম্মু
নিলু কোথায়?
আম্মুঃরুমে আছে রেডি হচ্ছে।
জান্নাতঃঠিক আছে,তুমি বসো আমি ওর রুমে
গিয়ে ওকে রেডি করে নিয়ে আসছি
আমিঃআমিও আসি?
জান্নাতঃজ্বি না,বসে থাকো এখানে(ঝাড়ি মেরে)
আমিঃবসছি তো,এতো ধমক দেয়ার কি আছে...!
জান্নাতঃকথা না শুনলে মাইরও দিবো হু
আমিঃপেত্নী...
কথার কোনো জবাব না দিয়ে নিলুর কাছে গেলো।
আম্মুঃমেয়েটাকে কষ্ট দিস না কখনো
আমিঃহুম
আম্মুঃখুব ভালোবাসে তোকে
আমিঃএহেম এহেম...😨(কাশি দিয়ে)
আব্বুঃএতো কাশি দেয়ার কি আছে,আমরা জানি
তোর আর জান্নাতের ব্যাপারে।
আমিঃআমাকে দেখে কি মনে হয়,আমি ওকে
কষ্ট দেয়?
আম্মুঃসেটা মনে হয়না,তবে বাদর মনে হয়
আমিঃআম্মুউউ
আম্মুঃআচ্ছা বাদ দে,প্রেম কেমন চলছে?
আমিঃতোমাদের যেমন চলতো আমাদের ঠিক
তেমন ভাবেই চলছে।নো এদিক সেদিক 😁
আম্মুঃতোক কি এমনি এমনি বাদর বলি
আমিঃহু😏
আম্মু আব্বুর সাথে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম।
---------------------------------------------------
জান্নাতের কথা,,,,
নিলুর রুমে এসে দেখে বেচারি রেডি হচ্ছে।
জান্নাতঃএখনো রেডি হওনি?
নিলুঃউহু..😔
জান্নাতঃতা এতো সাজসজ্জা কেনো শুনি,বয়ফ্রেন্ড
আছে নাকি আমার ননদীর?
নিলুঃজ্বি না ডিয়ার ভাবি,স্কুলে আজ নৃত্য অনুষ্ঠান
আছে।সেখানে আমরা কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে
নৃত্যতে নাম লিখিয়েছি। সেটার জন্যই এতো
সাজসজ্জা করতে হচ্ছে।
জান্নাতঃতাই বুঝি,তা কোর গানে নৃত্য দিবে?
নিলুঃরবীন্দ্রনাথে গানে
জান্নাতঃওয়াও,কি গান শুনি?
নিলুঃতাতা থৈ থৈ
জান্নাতঃগান জানো এটা?
নিলুঃহুম পাড়ি।
জান্নাতঃশোনাও একটু
নিলুঃমম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে তাতা থৈ থৈ,
তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ। তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে
সদা বাজে তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ ...
জান্নাতঃবাহ সুন্দর গাইতে পারো তো(সাজিয়ে দিতে লাগলো)
নিলুঃআমিও তোমার গান শুনেছি
জান্নাতঃকোথায় শুনছো?
নিলুঃভাইয়ার ফোনে,তুমি গানটাই বলছিলা।তাই
আমার সব ফ্রেন্ডরা মিলে এই গানটাই ঠিক করেছি
জান্নাতঃওহ,,,,
নিলুঃজানো আজ খাবার টেবিলে বসে মুখ ফসকে
তোমাকে ভাবি বলে ফেলছিলাম।
জান্নাতঃতারপর কি হলো?
নিলুঃকেউ বুঝে উঠতেই পারেনি
জান্নাতঃযদি বুঝতে পারতো তাহলে তো তোমাকে
বকা দিতো।
নিলুঃসেটা একটু দিতো
জান্নাতঃসাবধানে কথা বলতে শেখো
নিলুঃঠিক আছে।
জান্নাতঃহুম
নিলুকে রেডি করে বাইরে নিয়ে আসলো।
----------------------------------------------------------
নিলয়ের কথা,,,,
নিলুকে রেডি করে বাইরে নিয়ে আসলো।
জান্নাতঃহুম এখন চলো
আমিঃকিরে তুই আজ শাড়ি কেনো?
নিলুঃস্কুলে নৃত্য অনুষ্ঠান আছে সেই জন্য।
আমিঃস্কুলে অনুষ্ঠান তাতে তোর কি?
জান্নাতঃবুদ্ধু নিলু সেখানে নৃত্য পরিবেশন করবে।
আর তোমার এসব জেনে লাভ নেই চলো
আমিঃওকে চলো।
আব্বু আম্মুকে বিদায় দিয়ে নিচে আসতেই জান্নাত
ওদের গাড়িতে উঠতে বলল,,,,
জান্নাতঃগাড়িতে ওঠো
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃগাড়ি করে যাবো
আমিঃসরি পাড়বো না
জান্নাতঃকেনো পাড়বে না?
আমিঃএমনি পাড়বো না।
জান্নাতঃকারণ না বললে যেতে হবে
আমিঃআমি তোমাদের মতো এতো বড়লোক নই,
তাই বলে যে তোমার গাড়ি করে আমাদের যেতে
হবে সেটা কিন্তু না।তুমি গাড়ি করে কলেজে যাও
আমি নিলুকে ওর স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি
কলেজে চলে যাবো।
জান্নাতঃমাথায় সব সময় উল্টাপাল্টা কথা ঘুরে তাইনা?
আমিঃহয়তো তোমার কাছে উল্টাপাল্টা কথা।
জান্নাতঃএতো কথা বলা বাদ দিয়ে গাড়িতে উঠো
আমিঃসরি পাড়বো না
জান্নাতঃতুমি না পাড়লে, নিলু চলো।
আমিঃনিলুও যাবে না।
জান্নাতকে দেখে স্পষ্ট বুঝতে পাড়ছিলাম রেগে
গেছে।তবুও স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে,,,
জান্নাতঃএকটা রিক্সায় করে তিনজন গেলে নিলুর
সাজসরঞ্জাম একদম নষ্ট হয়ে যাবে।
আমিঃদুটো রিক্সা নিতে পাড়ি,,,
জান্নাতঃতবুও গাড়িতে যাবে না?
আমিঃনা
জান্নাতঃওকে,আমি আর নিলু একটাতে যাচ্ছি
তুমি আমাদের পিছু পিছু আরেকটা নিয়ে আসো
আমিঃনিলু একা একটাতে যাক,আমি আর তু.....
জান্নাতঃচুপ।এই মামা যাবেন?
রিক্সাঃহ্যা আপা যাবো
জান্নাতঃনিলু উঠো,আর তুমি অন্য একটা নিয়ে আসো
আমিঃহুম
জান্নাত আর নিলু চলে যাওয়ার ২ মিনিটের মাথায়
আমিও একটা রিক্সা নিয়ে ওদের পিছু পিছু গেলাম।
নিলুর স্কুলে এসে ওকে এগিয়ে দিয়ে দুজন একটা
রিক্সা নিয়ে রওনা দিলাম।
জান্নাতঃতুমি এমন কেনো হু?
আমিঃআমি আবার কেমন?
জান্নাতঃআমার একটা কথাও শোনো না
আমিঃআমি আবার কি শুনলাম না
জান্নাতঃএই যে আমার গাড়িতে উঠলে না
আমিঃআবার সেই একই কথা।
জান্নাতঃআমাকে বিনা কারণে গাড়িতে যেতে দেখছো?
আমিঃআমি কারণ অকারণ হিসাব করছি না
জান্নাতঃতাহলে এমন করছো কেনো?
আমিঃদে.......
কিছু একটা বলার আগেই পকেট থেকে ফোন
বেজে ওঠে।বের করে দেখলাম বৃষ্টি কল করেছে।
জান্নাতের সামনে বসে ওর সাথে কথা বলা
মোটেও ঠিক হবে না।তাই কল কেটে দিয়ে সাইলেন্ট
করে পকেটে রেখে দিলাম।
জান্নাত আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকার
পর জিজ্ঞাস করলো,,,,
জান্নাতঃকে কল করেছিলো
আমিঃতেমন কেউ না
জান্নাতঃজানতে চেয়েছি কে?
আমিঃফ্রেন্ড
জান্নাতঃতোমাকে বলছি না,কোনো মেয়ের সাথে
না বলতে তাহলে মেয়েরা তোমাকে কল দেয় কেনো
আমিঃবাবু তুমি আমাকে এমনি এমনি সন্দেহ
করছো।আমরা শুধুমাত্র ফ্রেন্ড আর কিছু না।
জান্নাতঃতাহলে আমার সামনে বসে কথা বলতে
তোমার কি সমস্যা?
আমিঃওকে আবার কল দিলে কথা বলবো ওকে?
জান্নাতঃহুম
দুজন কথা বলতে বলতে কলেজে চলে আসলাম।
জান্নাতকে বলে টয়লেটে চলে আসলাম।বৃষ্টিকে
কল দিতে হবে সেই জন্য।বৃষ্টির সাথে কথা বলা
শেষ করে ঈশানকে কল দিয়ে ওর সাথে কথা
বলতে বলতে জান্নাতের কাছে আসলাম।
তারপর দুজন মিলে আড্ডাখানায় এসে সবাই
মিলে আড্ডা দেয়ার পর ক্লাসে চলে গেলাম।ক্লাস
শেষ করে জান্নাত ম্যামের সাথে(ওর মামির)কথা
বলছে আর আমি ল্যাম্পপোস্টের মতো দাঁড়িয়ে
উনাদের কথা শুনছি।তাদের কথা বলা শেষ করে
দুজনে রিক্সায় উঠলাম।
চলবে....................
(বেশি করে স্টিকার কমেন্ট করলে খুশি হবো।রিপোর্ট খাইছি তাই আইডিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
https://golpokahini.com/%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b6%e0%a7%88%e0%a6%b6%e0%a6%ac-%e0%a6%ab%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a7%8b%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a6%bf/
উত্তরমুছুন