পর্বঃ৫
#আবির হাসান নিলয়
জান্নাতের সাথে এখন আর কথা হয় না।দেখা
হলেও পাশ কাটিয়ে চলে আসি।নিজেকে বদলাতে
চেয়েছি কিন্তু মনটা আগের মনই আছি।সব
সময় জান্নাতের কথা মনে পড়ে।আগে কতো ওকে
জ্বালাতাম কিন্তু এখন আর জ্বালাই না।ইচ্ছা
করলেও সম্ভব হয় না।রাতের খাবার শেষ করে
ছাদে আসলাম।এই সময় জান্নাত পড়াশোনা
করতে ব্যস্ত থাকে তাই ছাদে আসার জন্য এটাই
উপযুক্ত সময়।আপনাদের আগে বলা হয়নি,
ছাদে রাতের বেলা লাইট জ্বলানো থাকে।কেনো
থাকে সেটা জান্নাত আর জান্নাতের বাবাই ভালো
বলতে পাড়বে। দোলনার উপরে বসে ঈশানের
সাথে কথা বলছিলাম কিন্তু হঠাৎ করেই সব লাইট
বন্ধ হয়ে গেলো।কারেন্ট যাওয়ার আর সময়
পেলো না।ঈশানকে বাই বলে উঠে দাঁড়াতে সামনে
কাউকে অনুভব করা যাচ্ছিলো।তবে অন্ধকারে
তার চেহারা একদম বোঝা যাচ্ছিলো না।
আমিঃকে ওখানে?
—.........(চুপ)
এমন চুপ থাকা দেখে মনে একটা সন্দেহ হলো।
জান্নাত নয়তো...!যেই হোক একটু মজা নেয়।
আমিঃআপনি কি ভুত নাকি পেত্নী?
—...........(এখনো চুপ করে আছে)
আমিঃশোনেন,আপনি ভুত হোন বা পেত্নী আমার
কোনো জায় আসে না।তবে আপনার কাছে একটা
হেল্প চাই।হেল্পটা হলো,৫ তলায় আমার গার্লফ্রেন্ড
থাকে।গার্লফ্রেন্ড না, তবে আমি ওকে খুব ভালো
বাসি।কিন্তু কুত্তীটা আমাকে একদম ভালোবাসে না।
আপনারা তো মানুষদের ঘাড় মটকান তাই আপনি
যদি আমার গার্লফ্রেন্ড থুক্কু ঐ ছেমরিটার ঘাড়
মটকান তাহলে আমি আপনাকে পেট ভরে খাওয়াবো।
করবেন আমার হেল্প?
জান্নাতঃকুত্তা আমার ঘাড় মটকাবে তাই না,আমি
এখন তোর ঘাড় মটকাবো। কি ভেবেছিস আমার
সাথে কথা বলবি না বলে আমি কষ্ট পাবো।মোটেও
না,দেখ আমি কতো ভালো আছি।
আমিঃতাহলে কান্না করছো কেনো?
জান্নাতঃসেটা আমার ইচ্ছা তাতে তোর কি,তুই
তো আমার ক্ষতি চাস তাই এমন কথা বলছিলি।
তোকে ভালোবাসাই ভুল,প্রতিটা দিন তোর জন্য
কষ্ট পেয়েছি।কিন্তু তোকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তুই
একদম ঠিক আছিস।
আমিঃভালোবাসো আমাকে?
জান্নাতঃনা আমি কাউকে ভালোবাসি না
আমিঃতাহলে বললে যে
জান্নাতঃতোকে ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আর
একদম ভাসি না।
আমিঃসরি বাবু
জান্নাতঃএকদম বাবু বলবি না।আমি তোকে আর
ভালোবাসি না।কাল সকাল হতেই তুই বাসা ছেড়ে
চলে যাবি।
আমিঃবাসা থেকে চলে যাবো কেনো?
জান্নাতঃএটা আমার বাসা,আমি যেটা বলবো
সেটাই হবে(কলার ধরে)
আমিঃচলে গেলে হ্যাপী থাকবে?
জান্নাতঃহ্যা অনেক বেশি হ্যাপী থাকবো(ঘুরে দাঁড়িয়ে)
আমিঃকিন্তু আমি তো যাবোনা(জড়িয়ে ধরে)
জান্নাতঃতুই আমাকে জড়িয়ে ধরার সাহস কোথায়
পেলি,ছাড় আমাকে।
আমিঃসরি বাবু
জান্নাতঃতোর সরির গুষ্টি কি*** হারামি।ছাড় বলছি
আমিঃছাড়ার জন্য তো ধরিনি সোনা(শক্ত করে ধরে)
জান্নাত এক প্রকার বিরক্তি হয়ে নিজেই ছাড়ানোর
জন্য চেষ্টা করছে।কিন্তু বেচারিকে এমন ভাবে
ধরে রাখছি ছাড়ার কোনো উপায় নেই।কিছু সময়
ছাড়ানোর চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হচ্ছিলো তখনি
হাতে কামড় বসিয়ে দেয়।বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিতে
হলো।ছেড়ে দিয়ে হাত ধরলাম,,,,
আমিঃকামড় দিলে কেনো?
জান্নাতঃতোকে ছাড়তে বলছিলাম না
আমিঃসত্যি আমাকে ভালোবাসো না?
জান্নাতঃনা ভাসিনা
আমিঃঠিক আছে আমি তাহলে যায়
জান্নাতকে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে যাবো তখনি
হাত ধরে ঘুরিয়ে নিয়ে গালের উপর সিডর চালালো,,
জান্নাতঃঠাসস ঠাসসস
আমিঃমারলে কেনো?
জান্নাতঃআমাকে কষ্ট দিতে তোর অনেক ভালো
লাগে তাই না?(জড়িয়ে ধরে)
আমিঃমারার পর আসছে ভালোবাসা দেখাতে
জান্নাতঃলেগেছে বুঝি?
আমিঃহুম অনেক জোড়ে
জান্নাতঃআরো জোড়ে দেয়ার দরকার ছিলো।
আমিঃচুপপ😠
জান্নাতঃচলো দোলনায় বসি
আমিঃহুম
জান্নাতের সাথে দোলনায় বসলাম।আজকে জান্নাত
একটু বেশিই পাগলামি করতে শুরু করলো।
কোনো কথা না বলে আমার কোলে বসে পড়লো।
আমিঃবেশি পাগলামো হয়ে যাচ্ছে না?
জান্নাতঃআরো বেশি করবো দেখতে চাস?
আমিঃতুই তুকারি বাদ দাও তো
জান্নাতঃতুই যখন আমাকে বলিস সেটা কি হয়?
আমিঃআমি তো এ......
আর কোনো শব্দ বের হওয়ার সুযোগ হলো না।
জান্নাতের নরম ঠোঁটের উষ্ণতায় মনে হচ্ছিলো
কোনো এক অজানা সুখের রাজ্যে ভ্রমণ করছি।
কিছুক্ষণ জান্নাতের সাথে তাল মেলানোর পর
নিজ থেকেই ছেড়ে দিলো।হাপিয়ে উঠেছে অনেকটা
তবুও আমার সাথেই লেপটে আছে।আমার দিকে
ঘুরে বসে থুতনি ধরে খেলা করছে।একদম বাচ্চা
লাগছে জান্নাতের এমন আচরণ দেখে.....
আমিঃকোল থেকে নেমে বসো
জান্নাতঃআর একটা কথা বললে তোর কাদে
বসে থাকবো।
আমিঃওকে আর বলবো না
জান্নাতঃকি জেনো বলেছিলি,আমি রোমান্টিক না।
এখন থেকে তুই হারে হারে টের পাবি আমি
আনরোমান্টিক নাকি তুই আনরোমান্টিক।
আমিঃঠিক আছে দেখবো।এখন নিচে যায়,কেউ
এসে পড়লে খারাপ ভাববে।
জান্নাতঃকেউ আসবে না,আমি ছাদের গেট বন্ধ
করে আসছি।
আমিঃএখানে থেকে কি করবো?
জান্নাতঃআমার সাথে প্রেম করবা জানু
আমিঃতুমি জানলে কি করে আমি ছাদে আছি?
জান্নাতঃআমার ননদী আছে কিসের জন্য?
আমিঃমানে...?
জান্নাতঃনিলু বলছে আমাকে।
আমিঃওহ
জান্নাতঃহুম
টুকটাক দুজন কথা বলছিলাম।জান্নাতের হাফ ভাব
দেখে বুঝতে পাড়ছিলাম মেয়েটার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে,
কিন্তু জেদটাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।ওর একটাই
কথা আজ সারারাত আমার সাথে প্রেম করবে।
এদিকে আমার যায় যায় অবস্থা।সেই কখন থেকে
কোলে বসে আছে আটার বস্তা থুক্কু জান্নাত।
আমিঃজান্নাত তোমাকে কিছু কথা বলি?
জান্নাতঃ........(চুপ করে আছে)
আমিঃকি হলো কথা বলছো না কেনো?
জান্নাতঃ......
আবারো কোনো উত্তর না দেয়াতে জান্নাতের
চেহারা সামনে এনে দেখলাম ঘুমিয়ে পড়ছে।
চাঁদের নিভু নিভু আলোতে অপরূপ লাগছে পাগলিকে।
আগেই বলেছি জান্নাত তেমন সাজসজ্জা করে না,
তবে অনেক স্বপ্ন বিলাসী। আর চাঁদের আলোতে
তাদেরকেই অতিমাত্রায় মায়াবী দেখায় যারা স্বপ্ন
বিলাসভঙ্গি। কপালে একটা চুমু দিয়ে পকেট থেকে
ফোন বের করে ঘুমন্ত জান্নাতের কয়েকটা ছবি
তুলে নিলাম।
কিছু সময় জান্নাতকে দেখার পর চিন্তাই পরে
গেলাম।এখন কিভাবে জান্নাতকে নিয়ে যাবো।
ওর বাসায় নিয়ে যেতে কোনো সমস্যা হবে না।
কিন্তু ওর আব্বু যদি দেখে তার মেয়ের সাথে
রাতভর প্রেম করছি তাহলে তো আমি শেষ.....!
জান্নাতকে এখানে রেখেও যেতে পাড়বো না।
সব চিন্তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে জান্নাতের ফোন
থেকে ওর আব্বুকে কল দিলাম,,,,
আমিঃআসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল আমি নিলয়
আঙ্কেলঃওয়ালাইকুম আসসালাম,জান্নাতের ফোন
তোমার কাছে কেনো?
আমিঃআসলে আঙ্কেল ছাদে দুজন কথা বলতে
বলতে জান্নাত ঘুমিয়ে পড়েছে।আপনি যদি দয়া
করে বাসার দরজা খুলে দিতেন খুব উপকার হতো।
আঙ্কেলঃবুঝতে পাড়ছি আমি,বাসার দরজা নিশ্চয়
খোলা আছে কারণ আমি এখন অন্য বাসায় আছি
আমিঃধন্যবাদ(জোড়ে নিশ্বাস ফেলে)
আঙ্কেলঃএতো জোড়ে নিশ্বাস ফেলার কি আছে?
আমিঃআসলে আঙ্কেল আমি অনেক ভয়ে ছিলাম।
আপনি যদি আমাকে আর জান্নাতকে একসাথে
এতো রাতে দেখতেন তাহলে কয়েকটা মার নিজেকে
হজম করতে হতো।
আঙ্কেলঃহাহাহাহা,ভয় পেও না আমি সব জানি।
রাত অনেক হয়েছে এখন ওকে রুমে দিয়ে আসো
আমিঃঠিক আছে আঙ্কেল(হবু শ্বশুর আব্বা😁)
কল কেটে দিয়ে জান্নাতকে কোলে নিয়ে এগুতে
লাগলাম।ছাদেত গেট বন্ধ থাকার কারণে অনেক
কষ্ট করে খুলতে হলো।তবে আমার কপাল ভালো
জান্নাতদের ফ্লোর ৫ তলায়।না হলে ওকে নামিয়ে
দিতে দিতে আমিই উপরে চলে যেতাম।
জান্নাতদের বাসার সামনে এসে বুঝতে পারলাম
বাইরে থেকে নক দেয়া।দরজা খুলে ভিতরে এসে
আরেক কনফিউশনে পড়লাম।জান্নাতের রুম
কোনটা সেটাই বুঝতে পাড়ছিলাম না।এদিকে
আটার বস্তা টানতে টানতে আমার কোমর শেষ।
অনেক কষ্ট করে জান্নাতের দরজা খুঁজে বের
করলাম।বিছানায় শুয়ে দিয়ে ওর পাশেই বসে
পড়লাম।অনেকটা হাপিয়ে উঠেছি,কোমরটা টান
না করলেই নয়।পরক্ষণেই কিছু একটা মনে হতেই
জান্নাতকে রেখে বাসায় চলে আসলাম।
------------------------------------------------------
পরেরদিন,,,,,,,,
ঘুম থেকে উঠে দেখলাম জান্নাত পাশে বসে আছে।
অনেক বেশি অবাক হলাম,এতো সকালে এই
মেয়ে এখানে কি করছে।
আমিঃসারা রাত জ্বালিয়েও মন ভরেনি?
জান্নাতঃউহু,মন চাইছে গাল টেনে দেয়(গাল টেনে)
আমিঃটেনেই তো দিলে
জান্নাতঃএখন জড়িয়ে ধরো
আমিঃযাও তো সকাল সকাল ঢং করতে হবে না।
জান্নাতঃঐ ছেমড়া তুই ধরবি নাকি চিৎকার দেবো
আমিঃসব সময় ভয় দেখাও কেনো?
জান্নাতঃতুই ধরবি?
আমিঃহুম ধরছি।
নিজের অনিচ্ছাকৃত ভাবে জড়িয়ে ধরলেও অনেক
ভালো লাগছিলো।জান্নাতকে বুকের মাঝে শক্ত
করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলাম।
জান্নাতঃএখন যাও ফ্রেস হয়ে আসো
আমিঃহুম
বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে দেখি জান্নাত রুমে
নেই।হয়তো বাইরে গিয়ে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে।
রেডি হয়ে বাইরে আসলাম,,,,
আম্মুঃঘুম ভাঙলো তাহলে?
আমিঃহুম,তবে আরো ঘুমাতে ইচ্ছা করছে
জান্নাতঃএকদম না,নাস্তা করে কলেজে যাবো।
আমিঃতুমি যাবে যাও তাতে আমার কি?
জান্নাতঃআগে নাস্তা করো তারপর বলছি
আমিঃহু
তারপর সবাই মিলে নাস্তা করে নিলাম।নিলু আব্বুর
সাথে চলে যাওয়ার পর আমি আর জান্নাত আম্মুকে
বলে কলেজের দিকে রওনা দিলাম।
জান্নতঃআমি কিন্তু আব্বুকে তোমার ব্যাপারে সব
বলেছি,এবার তুমি তোমার পরিবারকে বলো।
আমিঃএখনি বলতে পাড়বো না।
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃআগে পড়াশোনা শেষ হোক তারপর।
জান্নাতঃবিয়ের পরেও তো পড়াশোনা করা যায়।
আমিঃএখন যদি তোমাকে বিয়ে করি তাহলে
তোমাকে খাওয়াবো কি?
জান্নাতঃরিক্সা আসছে যেতে যেতে কথা বলছি
আমিঃহুম(রিক্সায় উঠে)
জান্নাতঃআমার আব্বুর কি টাকার অভাব আছে,
এসব কিছু তো তোমার হবে।
আমিঃজান্নাত আমি তোমার বাবার সম্পত্তি দেখে
ভালোবাসিনি,তাই এসব কথা না বললে হ্যাপী হবো
জান্নাতঃওকে আর বলবো না।(কাদে মাথা রেখে)
দুজন কথা বলতে বলতে কলেজে চলে আসলাম।
আজ আর আমাকে ভাড়া দিতে হলো না,আর
দিবোই বা কেনো।হবু বউ এতো বড়লোক তাহলে
আমি কেনো হুদাই ভাড়া দিতে যাবো।জান্নাত
রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া চুকিয়ে দুজন কলেজের
ভিতরে আসলাম।
জান্নাতঃকোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবে না
আমিঃআমাকে কি তোমার লুচু মনে হয়?
জান্নাতঃঅনেক কিছুই মনে হয়,বাট আমি যেটা
বললাম সেটাই করতে হবে।
আমিঃআচ্ছা
জান্নাতঃথাক লাগবে না,তুমি আমার সাথে আসো
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃআমার সাথে বসেই আড্ডা দিবে
আমিঃকিন্তু বন্ধুরা তো অপেক্ষা করছে
জান্নাতঃআমারও ফ্রেন্ডরা অপেক্ষা করছে
আমিঃঝগড়া করতে চাইছো?
জান্নাতঃনা,মারামারি করতে চাইছি।ইচ্ছা করছে
ঘুসি মেরে নাক ফাটিয়ে দেয়।
আমিঃথাক বাবু সেটার আর দরকার নেই।চলো
তোমার সাথেই আড্ডা দিবো।
জান্নাতঃগুড বয়।
তারপর দুজন মিলে কলেজের শহিদ মিনারের
সিঁড়িটায় বসে কথা বলতে লাগলাম।ক্লাস টাইম
হতেই দুজন ক্লাসে চলে গেলাম।
সব গুলো ক্লাস শেষ করে বাইরে এসে জান্নাতের
জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন