• Breaking News

    বুধবার, ৩০ মে, ২০১৮

    কালো ছেলে ( বাস্তব ঘটনা থেকে)

    কালো হয়ে জন্মগ্রহন করা যদি পাপ হয়ে থাকে তাহলে পাপ আমি করি নি আমার বাবা-মা করেছে।পাত্র পক্ষের সামনে আসমার মুখ থেকে এরকম প্রশ্ন হয়ত কেউ আশা করে নি।চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না আসমার চোখে মুখে অসহায় আর বেদনার আর্তনাদ দেখে।এই নিয়ে সাত বারের মত আসমার বিয়ে টা ভেঙে যায়।সব ঠিক ঠাক হয়ে জাওয়ার পর যখন দেখার পর্ব আসে তখন ই বিয়ে অবধি যাওয়া হয়ে ওঠে না পাত্র পক্ষের।
    কলেজে যখন নতুন ভর্তি হই চেনা জানা সেরকম কেউ ছিলো না।লাস্ট বেঞ্চ এ বসে থাকা মেয়াটার প্রতি আমার নজর পড়লো।কি মায়া ভরা চোখ,ডাগর ডাগর চোখের চাহনি যে কারোর মন জয় করে নিতে পারে।নিজে থেকে ই গিয়ে আলাপ করলাম।জানতে পারলাম ওর নাম আসমা।ও সব সময় আমাকে এভোয়েড করে চলার চেষ্টা করে।ক্লাসে একজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম ও সুন্দরী মেয়েদের সাথে মিশে না তখন আরো বেশি কথা বলার আগ্রহ আমার বেড়ে গেলো।আস্তে আস্তে ওর মন জয়
    করে নিলাম।আমাদের মাঝে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
    কলেজে ছেলে মেয়েরা যখন এক সাথে কথা বলতো আমি আর আসমা তখন বসে বসে গল্প করতাম।
    অন্যদিনের মত আজ আসমা কে গোমড়া মুখে দেখতে পেলাম না ওর চোখে মুখে আনন্দের হাসি দেখতে পাচ্ছি। এতদিন পর আসমার মুখে হাসি দেখতে পেয়ে নিজের কাছেও খুব ভালোলাগছে।আসমা কে জিজ্ঞেস করতেই ও বলতে লাগলো জানিস রাতুলদের বাসা থেকে আজ আমাকে দেখতে আসবে বিয়ের কথা বার্তা বলে আমাদের বিয়ে টা পাকা করে নিবে।
    রাতুল এর সাথে আসমার ফেসবুকে পরিচয়।রাতুল বাবা-মার একমাত্র ছেলে।আসমা কে দেখেই রাতুল ওর প্রেমে পড়ে যায়।কালো বলে আসমা প্রেম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতো।রাতুল বুঝতে পারতো আসমা ওর সাথে রিলেশনে জড়াতে চায় না।কালো মেয়েদের নাকি এসব মানায় না তারা অন্য পাচ টা মেয়েদের মত ইচ্ছে করলেই কাউকে ভালবাসতে পারে না।কালো মেয়েদের নিয়ে গল্প,কবিতা,উপন্যাস অনেক লেখা হয়ে থাকে আর কালো মেয়েরা নায়িকার চরিত্রে গল্প, উপন্যাসেই সীমাবদ্ধ থাকে।আসমার কথা শুনে রাতুল আরো বেশি ওর প্রেমে পড়ে যায়।রাতুল আসমার ধারনা ভুল প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে চায় ভালবাসা গায়ের বর্ণ দিয়ে নয় মনের মাধুরী দিয়ে মেশানো রং দিয়ে সাজানো যায়।
    এভাবেই ওদের রিলেশন আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে।
    রাতুলের বাড়ি থেকে মুরুবীদের পাঠানো হলো আসমা কে আংটি পড়ানোর জন্য। আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি করা হলো না। আপ্যায়নে পাত্রপক্ষ মুগ্ধ। সবাই অপেক্ষা করছিলো আসমা কে দেখার জন্য জেনো তর সইছিলোনা। অপেক্ষার পালা শেষ।লাল টুকটুকে শাড়ি,হাতে লাল চুড়ি,কপালে টিপ,চোখের কাজলে আসমা কে আজ অপরুপা এক মায়াবী পরী মনে হচ্ছে।আসমা কে পাত্র পক্ষের সামনে বসানো হলো।তারা হয়ত ভেবেছিলো তাদের একমাত্র ছেলে সুন্দরী কোনো মেয়ে কে ভালবাসবে তাই আগে থেকে ছবি দেখার প্রয়োজন মনে করে নি।আসমা কে দেখে তাদের পছন্দ হলো না শুধু গায়ের বর্ণ কালো বলে।আজ যদি আপনাদের ঘরের মেয়ে টা কালো হয়ে জন্মগ্রহন করতো আপনারা কি করতেন?আপনারা ও চাইতেন ভালো একটা ছেলের সাথে ওর বিয়ে দিতে তাহলে আমার দোষ টা কোথায়? আসমার কথা শুনে সবাই মাথা নীচু করে আছে। কালো হয়ে জন্মগ্রহন করা যদি আমার পাপ হয়ে থাকে তাহলে পাপ আমি করিনি আমার বাবা-মা করেছে।
    আমাদের সমাজে কালো মেয়েরা অভিশপ্ত।তাদের চেহারার মধ্যে যে মাধুর্য লুকিয়ে থাকে সেটা হয়ত কেউ দেখতে আসে না। তারা অবহেলিত,লাঞ্চিত,বঞ্চিত।পরিবারের কাছে ও তারা বোঝা হয়ে যায়।
    কালো ছেলে ( বাস্তব ঘটনা থেকে)

    কোন মন্তব্য নেই:

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Fashion

    Beauty

    Travel