• Breaking News

    বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১

    ছোট বেলার প্রেম🥀

     


    আমি প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। প্রেম পড়লাম মামাতো বোনের উপর। মনে হয় তাকে ছাড়া আমি বাঁচবোই না। কিন্তু ক্লাস ফোরে গিয়ে তারসাথে একদিন কার্টুন দেখা নিয়ে ঝগড়া হলো। তারপর আমার সেকি কান্না ! 

    মা বলে আমি রুমের দরজা দিয়ে কান্না করছি। ব্রিজ থেকে লাফ দেওয়ারও নাকি হুমকি দিয়েছিলাম ঐবয়সে। এতেই বোঝা যায় আমার শরীরে রক্ত কম প্রেম বেশি।


    তারপর আমি প্রেমে পড়লাম ক্লাস সিক্সে, এমন ভাবে পড়লাম তারপর আমি আর উঠে দাড়াতে পারলাম না। আমার স্বয়নে স্বপ্নে তাকেই দরকার। মনে হয় তাকে ছাড়া আমি বাঁচবোই না টাইপ অবস্থা । মা আমার মানিব্যাগে মেয়ের ছবি দেখে কষা পিটানি দিলেন রীতিমতো ঘরের দরজা বন্ধ করে।


    কয়েকটা চড়থাপ্পড় খাওয়ার পর আমি ওমরসানীর মত করে বললাম ; আম্মাজান গরিব বলেকি আমরা প্রেম করতে পারবো না?প্রেম করা কি অপরাধ?.... ও আল্লাগো !


    শেষখানে শাবানা মিক্সড হইছে কারন আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই মা বডি স্প্রের বদল দিয়ে আমাকে ঢিল মারলেন। আর আমার ভেতর থেকে শাবানা বেরিয়ে আসলো। আমি শাবানাকে সরিয়ে আবার ওমরসানীকে ফিরিয়ে আনলাম "তুমি কি ভেবেছো এভাবে মারলেই আমি আমি সুমনা কে ভুলে যাবো, কক্ষনোই না আম্মাজান। তুমি ধামকি দিয়ে আমাদের আলাদা করতে পারবেন না।


    পাশের রুম থেকে আব্বা উঠে আসলেন। এসে আমাকে বিছানা থেকে তুলে আছাড় মেরে মাকে বললেন দেখো আরো বেশি বেশি বাংলা সিনেমা দেখো। এই বয়সেই কি ইছরে পাকা হয়েছে। সব নষ্টের গোড়া হচ্ছো তুমি ! 


    যেতে যেতে বলে গেলেন ওকে বলে দিও পড়ালেখা শেষ হওয়ার আগে ওর আশেপাশে কোন মেয়ে থাকবে না। ওকে বাপ্পারাজের মত থাকতে হবে।


    আমি খুবই দুঃখ পেলাম। চারদিকে এত এত শূণ্যতা,আমার মনে হয় আমার মত একা আর কেউ নাই।মনে মনে নদীর পারে গিয়ে বসে থাকি, ব্যাকগ্রাউন্ডে স্যাড গান বাজে।

    বাপ্পারাজের মত সারা রাত বালিশ ভিজিয়ে কান্না করলাম। আমার মা আনোয়ারার মত আমার কাছে আসলেন না।


    মেয়েটার সাথে আমার ব্রেকআপ হয়ে গেল ছয় মাসের মাথায়। বাবা মা আমাকে কঠিন নজরদারির উপর রাখা শুরু করলো। আমিও অনেকদিন থেমে রইলাম। পরেরবার প্রেমে পড়লাম ক্লাস সেভেনে গিয়ে।


    অ্যাসেম্বলির ঠিক এক মিনিট আগে যাওয়া ছাত্র আমি। একদিন বাসা থেকে রাগ করে চলে গেলাম আধঘন্টা আগে। আর দেখা পেলাম পৃথিবীর সবচে সুন্দরী মেয়েটার। নীল সাদা স্কুল ড্রেসটা মনে হয় শুধুমাত্র তার জন্যই বানানো হয়েছে। তাকে মনে হচ্ছে সুন্দরীদের সর্দারনী।


    আমি প্রেমে পড়ে গেলাম। কিন্তু বিপদ বাজলো অন্য জায়গায়। মেয়েটা আমাদের ক্লাসেই পড়ে কিন্তু মর্নিং শিফ্টে। ওর যখন ক্লাস শেষ হয় আমার হয় শুরু।


    আমি বাসা থেকে বের হয়ে ক্লাস বাদ দিয়ে মেয়েটার পিছেপিছে যাই। হাতে সবসময় ফুল রাখি। প্লাস্টিকের ফুল, নষ্ট হয় না।

    এভাবে আমি পাঁচছয়দিন তার পিছে পিছে ঘুরলাম। কথা বলার সাহস পেলাম না। তার সামনে গেলেই মনে হয় হৃদয়টা চট করে থেমে যায়।


    এইদিকে আবার ভয়ও হয় কোনদিন জানি স্কুল থেকে বাসায় খবর যায় আপনার ছেলে ক্লাস করে না। এমন হলে মা আমাকে গাছের সাথে বেধে মারবেন। আমাকে ইলিয়াস কাঞ্চনের মত বেধের আঘাত সহ্য করতে হবে।


    ভাগ্যবসত এমনটা হলো না। হলো লঙ্কাকাণ্ড। অনেক সাহস নিয়ে মেয়েটাকে প্রপোজ করলাম আর চিল্লাইয়া দিলো তার মাকে ডাক। 

    খাচ্চর মেয়ে কোথাকার! আক্কেল জ্ঞান কিচ্ছু নাই। 


    আমি দিলাম ভো দৌড়, শ্বাশুড়ি আম্মাও আমার পিছে লাঠি নিয়ে হারামিটারে ধর বলে দিলেন দৌড়। এলাকার বাচ্চাপোলাপাইন গুলা মজা পেয়ে তারাও দৌড় শুরু করলো। মনে হচ্ছে ম্যারাথন দৌড়, তবে জোরে দৌড়াতে হবে থামাথামি নাই, থামলেই আক্কেল গুডুম হয়ে যাবে।


    আমি ফার্স্ট হলাম। আমাকে কেউ ধরতে পারলো না কিন্তু মেয়েটার বাসার সামনে থেকে মকবুল স্যারের বাসা পর্যন্ত আমি দৌড়ানি খেলাম। পিছনে ফিরে দেখি শুধু বাচ্চাগুলো দৌড়াচ্ছে, শ্বাশুড়ি আম্মা কখন দৌড় থামিয়েছেন কেজানে! 


    এলাকায় আর মানসম্মান থাকলো না। আমি মনির খানের গান শোনা শুরু করলাম। মনির খান অন্জনা বললেই আমার সুন্দরীদের সর্দারনীর কথা মনে পড়ে। এই সামান্য কারনে ভুলে যাবো এত বড় ডন আমি না।


    কিন্তু এই ঘটনার পর এলাকায় আর থাকা যাচ্ছিলো না, আমি ঠিক করলাম যশোর শহরে গিয়ে পড়াশুনা করবো। এখানে আর না।


    বাবা মাকে পড়াশোনার কথা বুঝিয়ে আমি ক্লাস এইটে চলে গেলাম যশোর। বাবা আমাকে এইবার বুদ্ধি করে ভর্তি করালেন বয়েজ স্কুলে। আমি পড়ে গেলাম মহাবিপদে । আশেপাশে কেউ নেই, জিবনে মেয়ে নেই, কোন প্রেমিকা, নেই আছে শুধু শূণ্যতা!


    আমি অন্জনাকে ভুলে প্রাইভেট শুরু করলাম মামুন স্যারের কাছে। আব্বার পরিচিত স্যার বলে বাসায় রাজি করানো গেল। সাতজন মিলে পড়ি, চারজন মেয়ে। আলহামদুলিল্লাহ !


    আমি প্রথমদিন গিয়ে তেমন কোনো কথা বললাম না। এমন ভাব করলাম খুব ভালো স্টুডেন্ট আমি, তোমাদের বেইল নাই আমার কাছে।

    সব অংক করে দিলাম, এমন দ্রুত করে দিলাম মনে হলো আমি অংকের মাস্টার। স্যার খুশি হলেন বললেন বাহ তুমিতো খুব ভালো স্টুডেন্ট।


    এই প্রথম আমি আমার পাশে বসা মেয়েটার দিকে তাকালাম। মেয়েটা মুচকি হাসলো, যে হাসির অর্থ দু-হাত বাড়িয়ে ডাকা। মেয়েটার সামনের দাঁতের উপর দিয়ে আরেকটা দাঁত উঠেছে। এই দাঁত অন্যকারো উঠলে মনে হয় তাকে আর এতটা ভালো লাগতো না। বাকা দাঁতে সে হাসলে মনে হয় সূর্যাস্তের আগে আগে সরষে খেতের উপর এক ঝাক দোয়েল উড়ে যাচ্ছে। 


    আমি তার কথায় ময়না পাখি না ভেবে আপাতত খাতায় চোখ দিলাম। মেয়েটা মনে হয় আঘাত পেল, হাসির বিপরীতে আমারও একটা সৌজন্যের হাসি দেওয়া দরকার ছিলো। আমি দেইনি। এখন কি একটা ভেটকি মারবো?


    নাহ, এই মেয়েকে আমি পরদিন চিঠি দিবো। আর আমি নিশ্চিত সেও আমার কাছ থেকে এমন একটা কিছুর অপেক্ষাতেই আছে। মনের মাধুরি মিশিয়ে লিখে ফেললাম চিঠি। পরদিন তাড়াতাড়ি গিয়ে সুযোগ বুঝে রেখে দিলাম মেয়েটার খাতার ফাকে।


    ঐ খাতায় ছিলো মেয়েটার বাসার কাজ। অংক দেখাতে গিয়ে চিঠি পড়লো মামুন স্যারের হাতে। আমার আত্মা উড়ে গেল বাসার জিগা গাছে। এবার শিওর আমাকে ওখানে ঝুলানো হবে। 


    স্যার চিঠি পড়ে ফোন দিলেন আব্বাকে। বললেন আপনার ছেলে মেয়েদের হাসিতে সূর্যাস্তের লাল আভায় সরষে খেত দেখে, আবার সেই সরষে খেতের উপর দিয়ে দোয়েল পাখিও উড়ে যায়। মেয়েটার দাঁতের উপর দাত উঠেছে সেটাকে তার মনে হয় সরষে খেতের মাঝখানে জবার গাছ। বিয়ে করে মেয়ে হলে নাম রাখবে কৃষ্ণপক্ষ, আর ছেলে হলে কি রাখবে জানেন?


    আব্বা মনে হয় আর জানতে চাইলেন না ছেলে হলে কি নাম রাখবো। ফোন কেটে দিয়ে আমাকে ফোন দিলেন, বললেন আজকেই তুই বাসায় আসবি।

    আমি ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে, মেয়েটা সরু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এবার মুচকি হাসলাম, মেয়েটার ভ্রু কুচকে গেলো। চোখও ছোট হয়ে গেছে।


    মেয়েটার কুচকানো ভ্রু আর চোখ দেখে আমার মনে হলো রঙিন চাদরের উপর সুই দিয়ে যত্নে ফুল আকা হচ্ছে। এই ফুল যেকোনো মুহুর্তে আবার উবে যাবে। সেখানে আসবে কপালের ভাজে উচু উচু সবুজ পাহাড় । এই পাহাড়ে উঠে চিৎকার দিলে শব্দ ফিরে আসে। ভালোবাসলে ভালোবাসাও ফিরে আসবে। তারপর সেই পাহাড় উবে গিয়ে নতুন কিছু আসবে... । আমি রুম থেকে বের হতে হতে আবার মেয়েটার প্রেমে পড়লাম। মনে হয় আমি তাকে ছাড়া বাঁচবোনা।


    এখন বাসার দিকে যাচ্ছি, আব্বা অপেক্ষায় আছেন...



    কোন মন্তব্য নেই:

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Fashion

    Beauty

    Travel