:একটা সিগারেট দাও।
:কি?
:সিগারেট বলেছি।
:নাও।
:ওই,আমারে কি অন্ধ মনে হয়?
:কেন?
:এটা তো গাছের টুকরা।
:হুমম,সিগারেট খাওয়া ভাল না।এই নাও,চকলেট খাও।
:না,না,না।অর্ক???সিগারেট দিবা নাকি চলে যাব?
:চলে যাও।কোথ থেকে এসে সিগারেট চায়।যাও,ভাগো।
:যাচ্ছি,যাচ্ছি।ডাকলেও আসবো না কিন্তু,ভেবে নাও।যাচ্ছি কিন্তু?
:আরে,যাও তো।
:উহু,উহু।আর আসবো না।
:ধুরর,যাও।
চলে গেল আপদটা।এখন যা খুশি করতে পারব।
সে হল অনু।অনন্যা রহমান আর কি?
আমার ক্লাসমেট।ভাগ্যের কি এক নির্মম পরিহাসে তাদের বাসাতেই ভাড়া থাকি।
ক্লাসেও জালাবে আর বাড়িতে থাকতেও জালাবে।
আমিও তো মানুষ নাকি?একটু শান্তির তো প্রয়োজন।
আজ একটু অনেকদিন বাদে সিগারেট ধরিয়ে মনটাকে শান্ত করছিলাম কিন্তু তিনি তা হতে দেবেন না।
একটু পর পায়ের আওয়াজ পেলাম।আবারো আসছে মনে হয়।
:আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও।(পিছনে তাকাতে যেন চমকে গেলাম)
:(আরেকটা মেয়ে)
:সরি,আপনাকে বলিনি।আমি মনে করেছি যে অনন্যা হবে।
:ঠিক আছে।কিন্তু আপনি কে?
:আমি অর্ক।অনন্যাদের বাসায় ভাড়া থাকি।আপনি?
:আমি নিরুপমা।অনন্যার মামাতো বোন হই।
:ওহহ,বসেন।আমি আসি।(সিগারেট তা লুকিয়ে রেখেছিলাম,ফেলে দিলাম)
:না না থাক।আপনি বসেন।আমি যাই।
:আচ্ছা।
চলে গেল নিরুপমা।যথেষ্ট সুন্দরি।হিহি।
সুন্দরকে তো সুন্দর ই বলবে।
নিচে নেমে আমার রুমে গেলাম।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে আছি।
পিছন থেকে কেউ কাধে ধরল।
অনন্যা।
:এখানে কেন?
:কেন,আমার বাসা।আমি যেখানে খুশি আসবো।
:কি দরকারে বল।
:শপিং এ যাব আমরা।
:কি?আমি আর তুমি?
:ধ্যাত।কি সব আবোল তাবোল বল।নিরুপমার সাথে দুজনে যাব,তোমাকেও যেতে হবে।
:আমি পারব না,সরি।
:কিইইই?আম্মু।
:কি হয়েছে অনু।(অনন্যার আম্মু)
:দেখ,অর্ক নাকি আমদের সাথে যাবে না।
:অর্ক?তুমি তো জানোই আজকাল পরিস্থিতি কেমন।তাই তাদের সাথে একটু যাও না।
:আচ্ছা,আন্টি।যাব।
:হুমম।আমি যাই।অনেক কাজ আছে।
:রেডি হয়ে নাও।আমরা রেডি আছি।(অনন্যা)
:আচ্ছা।এবার কি রাজকুমারী আমার আস্থানা থেকে বের হবেন?
:হুমম,যাচ্ছি।১০ মিনিটের মধ্যে নিচে চলে এসো কিন্তু।
:জি।
নিচে নেমে হাটতে লাগলাম তিনজনে।
মেইন রোডে না গেলে গাড়ি পাওয়া যাবে না।তাই হাটতে হবে।
হাটতে হাটতে ক্লান্তি উঠে গেল।
দুই-তিনজন স্কুলের মেয়ে আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।
তারা বলতে লাগল,
:ওই দেখ ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম।আর সাথে দুইটা গার্ল্ফ্রেন্ড।
অনন্যা,আমি আর নিরুপমাও শুনল তাদের কথা।
অনন্যা রেগে গেল আর তাদের সামনে গেল,
:হ্যান্ডসাম হয়েছে তো কি হয়েছে?পিচ্চি মেয়ে হয়ে এত বড় বড় কথা,যাও।
:ওই,চল চল।না হলে মার দেবে।
নিরুপমা হাসতে লাগল এসব কান্ড দেখে।
মেইন রোডে এসে গেলাম।
রিক্সা একটা আসল,অনন্যা আগে ভাগে উঠে গেল।
এখন আমি উঠব নাকি নিরুপমা উঠবে এসব নিয়ে ভাবতে লাগলাম।
:অর্ক,উঠ।নিরুপমা আরেকটা দিয়ে আসবে।
:না,না।আপনি উঠেন নিরুপমা।আমি আসব একটু পরে।
:যা ইচ্ছা।
তারা চলে গেল।আমিও একটা রিক্সা পেয়ে চললাম তাদের পিছু পিছু।
ভাড়া তাড়া মিটিয়ে একটা বড় শপিংমলে গেলাম তিনজনে।
তারা বিভিন্ন জিনিস চয়েজ করতে লাগল আর আমি কুলির মত তাদের জিনিসগুলা বহন করতে লাগলাম।
:চল,কিছু খেয়ে নিই?(অনন্যা)
:হুমম।(নিরুপমা)
একটা রেস্টুরেন্টে বসে গেলাম তিনজনে।
অনন্যা অর্ডার করতে লাগল আর আমি সেগুলো শুনে বেহুসের মত হতে থাকলাম,
নুডলস,চিকেন কি কি জানি না।নামও শুনিনি।
:অর্ক,তুমি কি খাবে?
:আমি?এক কাপ কফি।
:আমিও এক কাপ কফি খাব।(নিরুপমা)
:আচ্ছা,দুই কাপ কফি নিয়ে আসেন আর বিলটাও নিয়ে আসেন।
বিল দিয়ে উঠে বাইরে বের হলাম আমরা।রিক্সা একটা ডেকে তাদের পাঠিয়ে দিলাম আর আমিও একটা রিক্সায় উঠে গেলাম।
রিক্সা থেকে নেমে যেই ভাড়া দিতে যাব দেখি যে পকেটে এক টাকাও নেই।হয়তো পরে গিয়েছে।১০০০ টাকার মত ছিল।
রিক্সাওয়ালা গেঞ্জাম করতে লাগল,কোনো উপায় না পেয়ে মোবাইলটা দিয়ে দিলাম।
রিক্সাওয়ালা যেন স্বর্ণ পাওয়ার মত চমকে গেল।আর চলে গেল।
আমিও চলে এলাম।
ঘুম আসছিল প্রচুর।তাই রুমে গিয়ে শুতে যাবার আগেই নিরুপমা আসল,
:অর্ক,আপনার মোবাইল।
:কিন্তু,আপনার কাছে কিভাবে?
:টাকা দিতে পারেননি দেখেছিলাম,তখন রিক্সাওয়ালাকে টাকা দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে আনলাম।
:ধন্যবাদ।
:হুমম।
ঘুমিয়ে গেলাম আমি।
ঘুম থেকে উঠে শরীরটা ভারী ভারী মনে হল।
কিন্তু কারনটা হল যে,
:ওই,অনন্যা,এখানে কি?আর আমাকে জরিয়ে ধরে কি করছ?
:আমার বিছানায় নিরুপমা ঘুমাচ্ছে।আর ঘুমাতে গেলে আমার কোলবালিশ লাগে তো তাই তোমাকে জরিয়ে ধরেছিলাম।
:আন্টি দেখলে কি ভাববে?
:আম্মু ই তো বলল, যে অর্ককে জরিয়ে ধরে ঘুমাও।
:(কি মা রে বাবা।সব পাগল)আচ্ছা,এবার যাও।
:যাচ্ছি যাচ্ছি।
উঠে চলে গেল।
আর আমি মোবাইল টিপতে লাগলাম।
কয়েকদিন বাদে,,,
নিরুপমার সাথে ফ্রেন্ডলি হয়ে উঠার আগেই সে চলে যাওয়ার জন্য রেডি হল,
আজ চলে যাবে।
আমি তার ব্যাগ নিয়ে নিচে নামিয়ে রিক্সাতে তুলে দিলাম,
:আচ্ছা,তাহলে আসি।
:হুমম।
:মামা,একটু ওয়েট করেন।
রিক্সা থেকে একটু পিছে আমার সামনে আসল,
:আপনার কাছে কলম হবে?
:না।
রিক্সাওয়ালা একটা কলম দিল,
নিরুপমা হাতে তার নাম্বার লিখে দিল,
:এইটা আমার নাম্বার।কল দিবেন কিন্তু।
:আচ্ছা।
:এইবার আসি।
:হুমম।
চলে গেল নিরুপমা আর রেখে গেল তার চিহ্ন আমার হাতে।
:অর্ক,নিরুপমার সাথে কি কথা বললে?
:কিছুনা,শুধু নাম্বার দিয়েছিল আর কি।
:কই দেখি?
:এইযে।
নাম্বারটা মুছে দিল অনন্যা।
:এইটা কি করলে?
:নাম্বার মুছে দিলাম।
:কেন?
:যাতে তুমি নিরুপমাকে ডিস্টার্ব করতে না পার।
:ভাল।
নিরুপমার নাম্বার হারিয়ে যেন জীবন হারিয়ে ফেললাম।এই কদিনে মেয়েটাকে প্রায় ভালবেসে ফেলেছিলাম।
শুধু ছিল বলার আর সময়ের অপেক্ষা।
কিন্তু নাম্বার হারিয়ে যেন নিরুপমাকেও হারিয়ে ফেললাম।
উদাস হয়ে টেবিলে বই নিয়ে বসে আছি।
বই উল্টাতে লাগলাম।কয়েক পৃষ্ঠা পরে একটা নাম্বার দেখলাম,
তাতে লেখা নেই কিছু।
কল দিলাম,
:হ্যালো।
:আপনি কে?
:আমি নিরুপমা,আপনি?
:অর্ক।
:ওহহ,এতদিন বাদে ফোন দিলেন?
:নাম্বার মুছে দিয়েছিল অনন্যা।
:ওহহ,আরো কোথা থেকে পেলেন?
:বইয়ের ভিতরে।আচ্ছা,এই নাম্বারটা কি আপনিই লিখেছিলেন?
:না তো,আমি কেন লিখতে যাব।
:ওহহ,আচ্ছা রাখি।
ফোন কেটে দিলাম।
ইদানিং অনন্যা কেমন যেন করে।
সারাদিন আমার পাশে পাশে থাকে।
আমি বের হলে আমার সাথে বের হয়।
নাকি সে আমাকে.............
কিন্তু কোনোদিন তো বলেনি।
বৃষ্টি পড়ছে।বের হতে পারছিনা।
বাড়িতে অনন্যা ছাড়া আর কেউ নেই।
বজ্রপাতের শব্দে অনন্যা আমার পাশে বসে গেল।
আবার একটা গর্জন হতেই আমাকে জরিয়ে ধরল,
:কি করছ কি?ছাড়।
:না,অর্ক তোমাকে একটা কথা বলব?
:বল।
:আমি তোমাকে ভালবাসি।
:হাহাহাহা,এরকম সময়ে তুমি ফান করছ?
:না,আমি সত্যি বলছি।
:আচ্ছা,তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালবাস তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও।
ছেড়ে দিল।কিন্তু বজ্রপাতের শব্দে আবারো জরিয়ে ধরল।
:প্লিজ অর্ক,আমি তোমাকে সত্তিই ভালবাসি।
:জানি।
:তাহলে?
:আমি নিরুপমাকে ভালবাসি।
:ওহহ,আচ্ছা।কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালবাসি সেটা?
:জানিনা,জানতেও চাই না।
:প্লিজ,অর্ক।তোমার জন্য জীবনও দিতে পারি।
:তাইতো?তাহলে এখনি বাইরে বের হয়ে মোবাইল নিয়ে কথা বলতে থাক।
:তাহলে কি আমার ভালবাসার প্রমাণ হবে?
:হুমম।
:দাও।
মোবাইল নিয়ে নিচে নেমে ফেসবুকে লগিন করল।আর ব্যভার করতে থাকল।
এদিকে আমার অনেক টেনশন হচ্ছে।
গর্জনে হাত পা কাপতে লাগল আমার।
তাড়াতাড়ি নিচে নেমে তাকে উপরে তুললাম।কোলে করে নিয়ে আসলাম।
আর সে আমার কোমরে জরিয়ে ধরে আসতে লাগল।
আর চোখ দিয়ে একটু পানি বের করতে লাগল,
:কি করছিলে টা কি?
:তুমি যা বললে তাই তো করলাম।
:আমি বললে কি মরতেও হবে?
:হুমম।
ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিলাম।
:উহু,উহু।(কাদতে লাগল)
:সত্যি ভালবাস তো?
:হুমম।
:কতটা?
:অনেক বেশি।
:কি করতে পারবে?
:এখনি তো জীবন দিতে গেলাম।আরো কি করতে হবে?
:বিয়ে করতে হবে।পারবে?
:হুমম।
:তবে এখন না।সময় হলে।
:হুমম।
এই ব্যাপার শেষে আরো এক কান্ড বাকি আছে।
নিরুপমা কল করল।
:হ্যালো,অর্ক।একটা কথা আছে।তাড়াতাড়ি........ পার্কে চল আসো।
:আচ্ছা।
তাড়াতাড়ি চলে গেলাম সেখানে।
:বল।
:আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে যে,আমি তোমাকে ভালবাসি।
:(আমি কি আসলেই হ্যান্ডসাম যে,দুইটা মেয়ে আমাকে ভালবাসি বলল)ধ্যাত,মজা করার লিমিট আছে।
:মজা করছি না,সত্যি।
:কবে থেকে?
:অনন্যাদের বাড়ি থেকে আসার আগে থেকে।তোমাকে ভালবাসি তাইতো নাম্বারটা লিখে দিয়ে এসেছিলাম।যাতে খুজে পাও তাই বইয়ের পাতায়ও লিখে দিয়ে এসেছিলাম।
:আমার জন্য কি কি করতে পারবে?
:তুমি যা বল।
:মরতে পারবে?
:হুমম।
:এই নাও বিষের বোতল।খেয়ে নাও।
:সত্যি?
:হুমম।
:তোমার জন্য জীবন দিতে পারব।গুডবাই।
খেয়ে নিল একটা পিল।
আধা ঘন্টা বাদে যখন ঘুম থেকে উঠল তখন বলতে লাগল,
:আমি কি এখন মরে গেছি?
:হুমম।
:তবে তুমি এখানে কি করে?আর জায়গাটাও এটা কেন?
:আমিও যে তোমাকে ভালবাসি তাই তোমার পিছু পিছু চলে এলাম।
:এত ভালবাস তবুও লুকাও কেন?
:কি লুকাচ্ছি?
:ভালবাসাটা।
:একটা কথা বলব?
:হুমম।
:তুমি কি সত্যিই ভাবছ যে মরে গেছ?
:হুমম।
:আরে গাধী,এই যে পিলটা খেয়েছ এটা চেতনানাশক শুধু।
:কিইইই?
:হুমম,আধা ঘন্টার জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলে তুমি।
:কিইইই?কুত্তা,শুয়র,বিলাই।আমার সাথে এরকম করতে পারলে?
:তো কি?বিষের বোতল দিয়ে দিতাম।
:হুমম।অনেক কষ্ট দিয়েছ কুত্তা।
:এখন একটু জরিয়ে ধরব?
:হুমম।
জরিয়ে ধরল আর মোবাইল বেজে উঠল,
অনন্যার কল............
(কি হবে কি জানি)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন