✍️অচেনা পথিক(নীল কাব্য)
শুরুতেই পরিচয় দিয়ে নেই,,, আমি কাব্য, একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরী করি।আর যাকে নিয়ে এ গল্প তার নাম নিশি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ে....।
চলুন গল্পে ফিরা যাক....
.
.
.
সকালবেলা অফিসে যাওয়ার জন্য গেট দিয়ে
বের হয়েছি এমন সময় উপর তলার
আন্টি ডাক দিলেন ।
আমি উপরে তাকিয়ে দেখি আন্টি বারান্দায়
দাড়িয়ে আছে ।
-জি আন্টি বলেন !(আমি)
-তুমি কি অফিসে যাচ্ছ বাবা ?(আন্টি)
-জি আন্টি ।
-বাবা একটা উপকার
করবে ?
-জি আন্টি বলেন ।
-আজকে নিশির বাবা
বাসায় নেই আর
আমার শরীরটাও ভাল
যাচ্ছে না । তুমি
কি নিশিকে একটু স্কুলে
নামিয়ে
দিতে পারবে ।
নিশি ?
এই সকাল বেলা করে ?
আমার মনের
ভিতর একটা সুক্ষ আনন্দ
বয়ে গেল । আজ তাহলে নিশির সাথে রিক্সায় চড়া
হয়েই যাবে !
ভালতো !
আমি রিক্সা নিয়ে নিশির
জন্য
অপেক্ষা করতে লাগলাম ।
কিছুক্ষন
পরেই নিশি নিচে নেমে এল
। পরনে
স্কুল ড্রেস আর হাতে
পানির ফ্লাক্স ।
আমার কেন জানি নিশিকে
দেখে
হাসি চলে এল ।
যেন পিচ্চি একটা বাচ্চা !
কিন্তু এই পিচ্চি মেয়ের সে
কি ভাব !
আমি নিজে কত বার নিজে
রিক্সায়
নিয়ে ঘুরতে চেয়েছি কিন্তু
নিশি
আমাকে একদমই পাত্তা
দেয় নি ।
এই তো মাস খানেক
আগের কথা । আমি
রিক্সায় করে আসছিলাম ।
দেখি
নিশি ওর স্কুলের সামনে
দাড়িয়ে
আছে । গেটের কাছে ।
বোধহয় ওর
মায়ের জন্য অপেক্ষা
করছে ।
আমি এই ব্যাপারটা এখনও
ঠিক বুঝি না
। এতো বড় মেয়েকে কেউ
সাথে করে
স্কুলে নিয়ে যায় ? আবার
সাথে করে
স্কুল থেকে নিয়ে আসে ?
আমার তো মনে হয়
নিশির বান্ধবীরা
এই ব্যাপারটা নিয়ে
হাসিহাসি করে
। আমি রিক্সা থামিয়ে
নিশিকে
বললাম
-বাসায় যাবে না ?
নিশি কেমন মুখ শুখনো
করে বলল
-জি যাবো ।
-তা এখানে দাড়িয়ে কেন
আছো ?
-আম্মু আসবে ।
-তোমার স্কুল -তোমার স্কুল ছুটি হয়
কয়টায ?
-দেড়টায় ।
আমি ঘড়ি দেখলাম । প্রায়
দুটো বেজে
গেছে ।
-আরে অনেক্ষণ ধরে
অপেক্ষা করছো
তো । আসো ! আমার
সাথে আসো ।
-জি না । আম্মু বকবে ।
-আরে বকবে না । এসো ।
-জি না আপনি চলে যান ।
আপনার
সাথে রিক্সায় চড়বো না ।
আমি আরো কিছু বলতে
চাইলাম কিন্তু
বললাম না । আসে পাশের
কয়েকজন
কৌতুহলী চোখ আমাদের
উপর ছিল ।
আমি কিছু না বলে চলে
এলাম । মনের
ভিতর সুক্ষ একটা অপমান
বোধও হচ্ছিল
।
যখন বাসায় আসলাম তখন
দেখি নিশির
আম্মু বাসা থেকে বের
হচ্ছে । আমি
কেবল আন্টিকে বললাম
-নিশি স্কুলের সামনে
দাড়িয়ে আছে
।
-আজকে একটু দেরী হয়ে
গেছে ।
-হুম । আমি ওকে নিয়ে
আসতে
চেয়েছিলাম কিন্তু ও
আমার সাথে
আসতে চাইলো না ।
আন্টি আমার দিকে একটু
তাকিয়ে
থেকে চলে গেল তাড়াহুড়া
করে ।
সেদিন নিশিকে নিজে
ডেকেও
রিক্সায় চড়াতে পারি নাই
আর আজকে
নিশি নিজে এসে আমার
রিক্সায়
চড়তেছে !
এই হল মজা !
নিশি রিক্সায় উঠে
বসলো ! কেমন যেন
একটু জড়সড় আর চুপ চাপ !
আমি আছি
আনন্দে । মনের ভিতর
একটা ফুর্তি ফুর্তি
লাগছে ।
মেয়ে হিসাবে নিশির সুনাম
সারা
এলাকা জুড়েই। অনেকে ওর
সাথে
সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা
করেছে কিন্তু
নিশি কাউকেই ঠিক পাত্তা
দেয় নি ।
আর ওর সাথে একই বাসায়
বাড়িতে
থাকার কারনে এমনিতেই
পাড়ার অন্য
ছেলে গুলোর ঈর্ষার পাত্র
ছিলাম আর
আজকে ওর সাথে রিক্সাতে
চড়তে
পেড়ে তো তাদের ঈর্ষার
আগুনে আর
একটু কেরোসিন ঢেলে
দিলাম !
আমি কেবল একটু অপেক্ষা
করছি কেউ
একজন দেখুক ! একজন
দেখলেই সারা
পাড়া জেনে যাবে ! আমি
এদিক
ওদিক দেখতে লাগলাম,
কিন্তু কোথাও
কেউ নাই ।
নাহ ! পোলাপাইন কামের
সময় থাকে
না ।
মোড়ের মাথায় এসে
কাউকে আশা
করেছিলাম কিন্তু এখানেও
নাই ! অবশ্য
এতো সকালে কেউ ঘুম
থেকেই উঠে
নাই মনে হয় !
নাহ হল না !
কাজ হল না !
-কি ব্যাপার এতো বার
এদিক ওদিক
তাকাচ্ছেন কেন ? কাকে
খুজছেন ?
-যে কাউকে ?
-মানে ?
-মানে হল একজন কে
খুজতে যে
আমাদের কে একসাথে
দেখুক !
নিশি আমার দিকে কেমন
অবিশ্বাসের চোখে
তাকালো !
তারপর বলল
-আপনার কথা ঠিক বুঝতে
পারলাম না !
আপনি কেন চাচ্ছেন কেউ
আমাদের
দেখুক ?
......আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম
-আরে তোমার সাথে রিক্সায় উঠলাম
এটা কেউ দেখবে না ?
...নিশি আমার থেকেও অবাক
হওয়ার ভাব করে বলল
-কেন শুনি ?
-আরে সুন্দরী মেয়ের সাথে
রিক্সায়
উঠলাম যদি সেটা যদি
কাউকে
দেখাতেই না পারলাম
তাহলে কি
লাভ বল !
নিশি কিছুক্ষন আমার
দিকে তাকিয়ে
থেকে বলল
-আচ্ছা ! আমার সাথে
রিক্সায় উঠলেন
সেটাতে কোন অনুভুতি
নাই কেউ
দেখলো না এইটাই
আপনার কাছে বড়
ব্যাপার?
এই বলে নিশি অন্যদিকে
তাকালো !
আমি কেবল অবাক হয়ে
লক্ষ্য করলাম
নিশি মুখ ভার করে
ফেলেছে !
-আরে ! তা হবে কেন ?
তোমার সাথে
রিক্সায় ওঠা সত্যি ......
আমি কিছু বলতে গিয়ে
থেমে গেলাম
।
আমার মনে কেবল একটা
প্রশ্নই দোলা
দিল কি ব্যাপার নিশি এই
ভাবে রাগ
করলো কেন ?
কেন রাগ করলো ?
-এই ! শুনো !
কোন খোজ নাই ! আমি
যে ওর পাশে
বসে আছি বা আমি যে ওকে
কিছু
বলতেছি কোন খোজ
নাই !
এই মেয়ে গুলাকে বোঝতে
পারে কার
সাধ্য ?
সেদিন এই মেয়েই আমার
সাথে
রিক্সায় উঠতে চায় নাই
আর আজকে যখন
রিক্সায় উঠেছে আমি
আনন্দিত কিনা
এই নিয়ে রাগ করে বসে
আছে । আশ্চর্য !!
কি করবো ?
আর খুব বেশি সময় নেই
নিশির স্কুল
আসতে ! মেয়েটা যদি মুখ
গোমড়া
করেই নেমে যায় তাহলে
ব্যাপারটা
কেমন হয়ে যাবে !
জীবনের প্রথমে নিশির
সাথে
রিক্সায় উঠলাম আর শেষ
হল একটা মুখ
গোমড়া দিয়ে !
আমি সাহস কর নিশির
হাত ধরে এদিকে
টান দিলাম ! একটা ঝাড়ি
খাওয়ার
সম্ভাবনা ছিল কিন্তু
দেখলাম নিশি
কিছু বলল না ! নিশি হাত
ছাড়িয়ে
নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে
শান্ত
কন্ঠে বলল
-কি বলবেন বলেন ?
-তোমার হাতে -তোমার হাতে কোন
পাওয়ার ষ্টেশন
আছে ? বা নেগেটিভ
চার্জ ?
-মানে কি ?
-না তোমার হাত ধরেই
আমার সারা
শরীরে কেমন একটা
কারেন্ট প্রবাহিকারেন্ট প্রবাহিত
হল ! আমি মানে আমার
রক্তের গ্রুপ এ
পজেটিভ কিনা ! নেগেটিভ
পজেটিভে সংঘর্ষ !!
-ফাজলামো করেন ?
-না সত্যি ! দেখ ! আর
একবার হাত ধরতে
দেও ঠিক আবার শক
খাবো ! এই দেখো !
এই বলে আমি আবার ওর
হাত ধরলাম !
এবং একটা শক খাওয়ার
মত অভিনয়
করলাম !
নিশি আবার ওর হাত
ছাড়িয়ে নিল !
-আরে দেখো না !
-হয়েছে ! আপনার আর ঢং
করতে হবে
না !
নিশির মুখে হাসি ফুটলো !
যাক
হাসিতো ফুটলো !
-আপনি খুব ফাজিল !
-আর তুমি খুব সুন্দর !
-হয়েছে ! লজ্জা শরম
কিচ্ছু নাই !
-আচ্ছা ! দাড়াও যাবার সময় তোমার
খবরই আছে !
-ইস ! আপনার সাথে গেলে
তো !
-মানে কি ? একা একা
কিভাবে
যাবা ? তোমার মায়ের না
শরীর
খারাপ ! এই জন্যই তো
আমাকে
দেহরক্ষী করে পাঠালো !
-পাহারাদার !!
-পাহারাদার ?
আরো কিছু বলার ছিল
কিন্তু দেখলাম
নিশির স্কুল চলে এসেছে !
নিশি
নেমে গেল ! যাওয়ার সময়
কেবল বলল
-আমার স্কুল দেড় টায়
ছুটি হয় !
-আমি জানি !
অফিসে দুইটার দিকে একটা মিটিং ছিল
। মিটিং না করেই এলাম !
এরকম দু-একটি মিটিং না করা কোন ব্যাপার না !
রিক্সা নিয়ে এসে দেখি
নিশি দাড়িয়ে আছে ।
রিক্সা থামাতেই ও রিক্সায় উঠে
বসলো !
কোন কথা ছাড়াই ! আমি
আসে পাশে
একটু লক্ষ করে দেখলাম
বেশ কিছু
কৌতুহলী চোখ আমাদের দিকে
তাকিয়ে আছে !
-চলুন !
রিক্সাওয়ালা মামাকে
চালাতে
বললাম
-ওরা কি তোমার
বান্ধবী ?
-হুম !
-তোমার বান্ধরী আমাদের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিল কেন ?
-আপনাকে দেখছিল !
-আমাকে ? কেন ?
নিশি একটু হেসে বলল
-এমনি !
-আচ্ছা তুমি ওদের কি বলেছ ?
-কি বলবো ?
-না মানে একটা ছেলের
সাথে একই
রিক্সায় আসলে আবার
যাচ্ছ ! তাদের
মনে তো একটা কৌতুহল
আসতেই পারে !
তাদের কে কি বলেছ ?
-শুনুন কি বলেছি বা কি
বলবো সেটা
আমার ব্যাপার ! আপনি
আপনার টা
চিন্তা করেন । আপনার ঐ
পাড়ার
লোকদের ফোন দেন ।
সকাল বেলা না
আফসোস হচ্ছিল কেউ
দেখলো না !
এখন
দেখুক !
-সত্যিই ফোন দেবো ?
-দেন । আমারতো আর
ভয় নাই !
আমি একটু হাসলাম ।
বললাম
-না থাক ! কেউ দেখুক বা না
দেখুক,
কিছু যায় আসে না ! একই
সাথে
রিক্সায় চড়েছি এটাই বড়
কথা !
হঠাৎ নিশি রিক্সা দাড়াতে
বলল !
-কি হল ?
-কিছু না !
-তাহলেরিক্সা দাড়াতে
বললে
কেন ?
নিশি আমার দিকে
কিছুক্ষন তাকিয়ে
থেকে বলল
-এই জন্যই আপনার
এতো দিনে কোন
গার্লফ্রেন্ড হয় নাই !
-মানে কি ?
-মেয়েদের কিভাবে পটাতে
হয়
আপনার জানা নাই ! সকাল
বেলা যখন
সাহস করে হাত ধরেছিলেন
মনে
হয়েছিল নাহ, আমি যেই
রকম
ভেবেছিলাম আপনি সেই
রকম না !
কিন্তু এখন দেখছি সেই
রকমই ।
-মানে কি ?
-মানে বুঝেন না । এই
গরমের বেলায়
একটা মেয়ে আপনার সাথে
রিক্সায়
যাচ্ছে ! মেয়েটার গরম
লাগছে না ?
-আচ্ছা ! বাতাস করবো ?
গরম লাগছে ?
আমার কথায় নিশি বেশ
বিরক্ত হল !
কিছুক্ণ সরু চোখে তাকিয়ে
রইলো
আমার দিকে তারপর
চোখের ইশারায়
দেখিয়ে দিল । আমি ওর
চোখ ইশারার
দিকে তাকিয়ে দেখালাম
ওখানে
একটা একটা আইসক্রিমের
ভ্যান !
আমি মুহুর্তের ভিতরেই
বুঝে গেলাম
কি করতে হবে ।
আসলেই আমি একটা গাধা !
নিশিকে
তো আরো আগেই
আইসক্রিম
খাওয়ানোর দরকার ছিল ।
লাফ দিয়ে দুটো চকবার
কিনে আনলাম
।
যখন আমাদের রিক্সাটা
পাড়ার ভিতর
এসে ঢুকলো দেখলাম
মোড়ের কাছে
আমাদের এলাকার বেশ
কিছু
পোলাপাইন দাড়িয়ে আছে
। আমাকে
আর নিশিকে এক রিক্সায়
দেখে ওদের
চোখ বড় বড় হয়ে গেছিল !
ওদের সামনে
দিয়ে যখন আমাদের
রিক্সাটা
যাচ্ছিল আমার নিজের
কাছে তখন
মনে হচ্ছিল যে আমি এই
এলাকার
রাজা ! নিজের রানী কে
নিয়ে
রিক্সা ভ্রমনে বের হয়েছি
। মুখে একটা
বিজয়ীর হাসি ! আমার
প্রজা গুলো
আমাকে দেখে সালাম
ঠুকছে !
বাসার কাছে যখন রিক্সা
থেকে
নামলাম নিশি আমাকে
বলল
-আপনার আশা তো পুরন
হল ! সবাই তো
দেখলো ! এখন নিশ্চই
সবাইকে গিয়ে
গাল গল্প দিয়ে বেরাবেন !
-না ! না ! ছিঃ ! আমাকে
দেখে
তোমার এমন ছেলে মনে
হয় ?
-না্হ ! মনে হবে কেন !
আমি জানি !
শুনুন আমি আশা করবো
আপনি যা
বলবেন
সত্যটা বলবেন !
আমি বললাম
-আচ্ছা আমি সত্যটাই
বলবো !
নিশি আমার কথা শুনে
একটু খুশি হল মনে
হল ! বলল
-আপনি একটা কথা জানতে
চেয়েছিলেন না ?
-কোন টা ?
-ঐ যে আমার বান্ধবীদের
আপনাকে
নিয়ে আমি কি বলেছি ?
-হুম !
-এই নিন ! এই কাগজে
লেখা আছে !
নিশি আমার দিকে একটা
দুমড়ানো
কাগজ এগিয়ে দিয়েই
ভিতরে চলে
গেল । চলে গেল বললে ভুল
হবে ! দৌড়
দিল !
আমি কাগজটা খুলতেই
একটা ধাক্কার
মত খেলাম !
সেখানে কেবল একটা
শব্দই লেখা
ছিল !
"বয়ফ্রেন্ড" !!!
আমি তো পুরাই বেকুব হয়ে গেলাম....
দৌড়ে বাসায় ফিরলাম এবং আম্মুকে দিয়ে নিশিদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম....
ওরাও রাজি,,,
তবে বিয়েটা ও ডাক্তার হবার পর হবে....
সবার দাওয়াত রইল.....
আমার ও অপেক্ষা করতে কোন সমস্যা নেই....
------সমাপ্ত-----
আরো ভালোবাসার গল্প পেতে আমার টাইমলাইন ফলো করুন.....
ধন্যবাদ.....
চলুন গল্পে ফিরা যাক....
.
.
.
সকালবেলা অফিসে যাওয়ার জন্য গেট দিয়ে
বের হয়েছি এমন সময় উপর তলার
আন্টি ডাক দিলেন ।
আমি উপরে তাকিয়ে দেখি আন্টি বারান্দায়
দাড়িয়ে আছে ।
-জি আন্টি বলেন !(আমি)
-তুমি কি অফিসে যাচ্ছ বাবা ?(আন্টি)
-জি আন্টি ।
-বাবা একটা উপকার
করবে ?
-জি আন্টি বলেন ।
-আজকে নিশির বাবা
বাসায় নেই আর
আমার শরীরটাও ভাল
যাচ্ছে না । তুমি
কি নিশিকে একটু স্কুলে
নামিয়ে
দিতে পারবে ।
নিশি ?
এই সকাল বেলা করে ?
আমার মনের
ভিতর একটা সুক্ষ আনন্দ
বয়ে গেল । আজ তাহলে নিশির সাথে রিক্সায় চড়া
হয়েই যাবে !
ভালতো !
আমি রিক্সা নিয়ে নিশির
জন্য
অপেক্ষা করতে লাগলাম ।
কিছুক্ষন
পরেই নিশি নিচে নেমে এল
। পরনে
স্কুল ড্রেস আর হাতে
পানির ফ্লাক্স ।
আমার কেন জানি নিশিকে
দেখে
হাসি চলে এল ।
যেন পিচ্চি একটা বাচ্চা !
কিন্তু এই পিচ্চি মেয়ের সে
কি ভাব !
আমি নিজে কত বার নিজে
রিক্সায়
নিয়ে ঘুরতে চেয়েছি কিন্তু
নিশি
আমাকে একদমই পাত্তা
দেয় নি ।
এই তো মাস খানেক
আগের কথা । আমি
রিক্সায় করে আসছিলাম ।
দেখি
নিশি ওর স্কুলের সামনে
দাড়িয়ে
আছে । গেটের কাছে ।
বোধহয় ওর
মায়ের জন্য অপেক্ষা
করছে ।
আমি এই ব্যাপারটা এখনও
ঠিক বুঝি না
। এতো বড় মেয়েকে কেউ
সাথে করে
স্কুলে নিয়ে যায় ? আবার
সাথে করে
স্কুল থেকে নিয়ে আসে ?
আমার তো মনে হয়
নিশির বান্ধবীরা
এই ব্যাপারটা নিয়ে
হাসিহাসি করে
। আমি রিক্সা থামিয়ে
নিশিকে
বললাম
-বাসায় যাবে না ?
নিশি কেমন মুখ শুখনো
করে বলল
-জি যাবো ।
-তা এখানে দাড়িয়ে কেন
আছো ?
-আম্মু আসবে ।
-তোমার স্কুল -তোমার স্কুল ছুটি হয়
কয়টায ?
-দেড়টায় ।
আমি ঘড়ি দেখলাম । প্রায়
দুটো বেজে
গেছে ।
-আরে অনেক্ষণ ধরে
অপেক্ষা করছো
তো । আসো ! আমার
সাথে আসো ।
-জি না । আম্মু বকবে ।
-আরে বকবে না । এসো ।
-জি না আপনি চলে যান ।
আপনার
সাথে রিক্সায় চড়বো না ।
আমি আরো কিছু বলতে
চাইলাম কিন্তু
বললাম না । আসে পাশের
কয়েকজন
কৌতুহলী চোখ আমাদের
উপর ছিল ।
আমি কিছু না বলে চলে
এলাম । মনের
ভিতর সুক্ষ একটা অপমান
বোধও হচ্ছিল
।
যখন বাসায় আসলাম তখন
দেখি নিশির
আম্মু বাসা থেকে বের
হচ্ছে । আমি
কেবল আন্টিকে বললাম
-নিশি স্কুলের সামনে
দাড়িয়ে আছে
।
-আজকে একটু দেরী হয়ে
গেছে ।
-হুম । আমি ওকে নিয়ে
আসতে
চেয়েছিলাম কিন্তু ও
আমার সাথে
আসতে চাইলো না ।
আন্টি আমার দিকে একটু
তাকিয়ে
থেকে চলে গেল তাড়াহুড়া
করে ।
সেদিন নিশিকে নিজে
ডেকেও
রিক্সায় চড়াতে পারি নাই
আর আজকে
নিশি নিজে এসে আমার
রিক্সায়
চড়তেছে !
এই হল মজা !
নিশি রিক্সায় উঠে
বসলো ! কেমন যেন
একটু জড়সড় আর চুপ চাপ !
আমি আছি
আনন্দে । মনের ভিতর
একটা ফুর্তি ফুর্তি
লাগছে ।
মেয়ে হিসাবে নিশির সুনাম
সারা
এলাকা জুড়েই। অনেকে ওর
সাথে
সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা
করেছে কিন্তু
নিশি কাউকেই ঠিক পাত্তা
দেয় নি ।
আর ওর সাথে একই বাসায়
বাড়িতে
থাকার কারনে এমনিতেই
পাড়ার অন্য
ছেলে গুলোর ঈর্ষার পাত্র
ছিলাম আর
আজকে ওর সাথে রিক্সাতে
চড়তে
পেড়ে তো তাদের ঈর্ষার
আগুনে আর
একটু কেরোসিন ঢেলে
দিলাম !
আমি কেবল একটু অপেক্ষা
করছি কেউ
একজন দেখুক ! একজন
দেখলেই সারা
পাড়া জেনে যাবে ! আমি
এদিক
ওদিক দেখতে লাগলাম,
কিন্তু কোথাও
কেউ নাই ।
নাহ ! পোলাপাইন কামের
সময় থাকে
না ।
মোড়ের মাথায় এসে
কাউকে আশা
করেছিলাম কিন্তু এখানেও
নাই ! অবশ্য
এতো সকালে কেউ ঘুম
থেকেই উঠে
নাই মনে হয় !
নাহ হল না !
কাজ হল না !
-কি ব্যাপার এতো বার
এদিক ওদিক
তাকাচ্ছেন কেন ? কাকে
খুজছেন ?
-যে কাউকে ?
-মানে ?
-মানে হল একজন কে
খুজতে যে
আমাদের কে একসাথে
দেখুক !
নিশি আমার দিকে কেমন
অবিশ্বাসের চোখে
তাকালো !
তারপর বলল
-আপনার কথা ঠিক বুঝতে
পারলাম না !
আপনি কেন চাচ্ছেন কেউ
আমাদের
দেখুক ?
......আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম
-আরে তোমার সাথে রিক্সায় উঠলাম
এটা কেউ দেখবে না ?
...নিশি আমার থেকেও অবাক
হওয়ার ভাব করে বলল
-কেন শুনি ?
-আরে সুন্দরী মেয়ের সাথে
রিক্সায়
উঠলাম যদি সেটা যদি
কাউকে
দেখাতেই না পারলাম
তাহলে কি
লাভ বল !
নিশি কিছুক্ষন আমার
দিকে তাকিয়ে
থেকে বলল
-আচ্ছা ! আমার সাথে
রিক্সায় উঠলেন
সেটাতে কোন অনুভুতি
নাই কেউ
দেখলো না এইটাই
আপনার কাছে বড়
ব্যাপার?
এই বলে নিশি অন্যদিকে
তাকালো !
আমি কেবল অবাক হয়ে
লক্ষ্য করলাম
নিশি মুখ ভার করে
ফেলেছে !
-আরে ! তা হবে কেন ?
তোমার সাথে
রিক্সায় ওঠা সত্যি ......
আমি কিছু বলতে গিয়ে
থেমে গেলাম
।
আমার মনে কেবল একটা
প্রশ্নই দোলা
দিল কি ব্যাপার নিশি এই
ভাবে রাগ
করলো কেন ?
কেন রাগ করলো ?
-এই ! শুনো !
কোন খোজ নাই ! আমি
যে ওর পাশে
বসে আছি বা আমি যে ওকে
কিছু
বলতেছি কোন খোজ
নাই !
এই মেয়ে গুলাকে বোঝতে
পারে কার
সাধ্য ?
সেদিন এই মেয়েই আমার
সাথে
রিক্সায় উঠতে চায় নাই
আর আজকে যখন
রিক্সায় উঠেছে আমি
আনন্দিত কিনা
এই নিয়ে রাগ করে বসে
আছে । আশ্চর্য !!
কি করবো ?
আর খুব বেশি সময় নেই
নিশির স্কুল
আসতে ! মেয়েটা যদি মুখ
গোমড়া
করেই নেমে যায় তাহলে
ব্যাপারটা
কেমন হয়ে যাবে !
জীবনের প্রথমে নিশির
সাথে
রিক্সায় উঠলাম আর শেষ
হল একটা মুখ
গোমড়া দিয়ে !
আমি সাহস কর নিশির
হাত ধরে এদিকে
টান দিলাম ! একটা ঝাড়ি
খাওয়ার
সম্ভাবনা ছিল কিন্তু
দেখলাম নিশি
কিছু বলল না ! নিশি হাত
ছাড়িয়ে
নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে
শান্ত
কন্ঠে বলল
-কি বলবেন বলেন ?
-তোমার হাতে -তোমার হাতে কোন
পাওয়ার ষ্টেশন
আছে ? বা নেগেটিভ
চার্জ ?
-মানে কি ?
-না তোমার হাত ধরেই
আমার সারা
শরীরে কেমন একটা
কারেন্ট প্রবাহিকারেন্ট প্রবাহিত
হল ! আমি মানে আমার
রক্তের গ্রুপ এ
পজেটিভ কিনা ! নেগেটিভ
পজেটিভে সংঘর্ষ !!
-ফাজলামো করেন ?
-না সত্যি ! দেখ ! আর
একবার হাত ধরতে
দেও ঠিক আবার শক
খাবো ! এই দেখো !
এই বলে আমি আবার ওর
হাত ধরলাম !
এবং একটা শক খাওয়ার
মত অভিনয়
করলাম !
নিশি আবার ওর হাত
ছাড়িয়ে নিল !
-আরে দেখো না !
-হয়েছে ! আপনার আর ঢং
করতে হবে
না !
নিশির মুখে হাসি ফুটলো !
যাক
হাসিতো ফুটলো !
-আপনি খুব ফাজিল !
-আর তুমি খুব সুন্দর !
-হয়েছে ! লজ্জা শরম
কিচ্ছু নাই !
-আচ্ছা ! দাড়াও যাবার সময় তোমার
খবরই আছে !
-ইস ! আপনার সাথে গেলে
তো !
-মানে কি ? একা একা
কিভাবে
যাবা ? তোমার মায়ের না
শরীর
খারাপ ! এই জন্যই তো
আমাকে
দেহরক্ষী করে পাঠালো !
-পাহারাদার !!
-পাহারাদার ?
আরো কিছু বলার ছিল
কিন্তু দেখলাম
নিশির স্কুল চলে এসেছে !
নিশি
নেমে গেল ! যাওয়ার সময়
কেবল বলল
-আমার স্কুল দেড় টায়
ছুটি হয় !
-আমি জানি !
অফিসে দুইটার দিকে একটা মিটিং ছিল
। মিটিং না করেই এলাম !
এরকম দু-একটি মিটিং না করা কোন ব্যাপার না !
রিক্সা নিয়ে এসে দেখি
নিশি দাড়িয়ে আছে ।
রিক্সা থামাতেই ও রিক্সায় উঠে
বসলো !
কোন কথা ছাড়াই ! আমি
আসে পাশে
একটু লক্ষ করে দেখলাম
বেশ কিছু
কৌতুহলী চোখ আমাদের দিকে
তাকিয়ে আছে !
-চলুন !
রিক্সাওয়ালা মামাকে
চালাতে
বললাম
-ওরা কি তোমার
বান্ধবী ?
-হুম !
-তোমার বান্ধরী আমাদের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিল কেন ?
-আপনাকে দেখছিল !
-আমাকে ? কেন ?
নিশি একটু হেসে বলল
-এমনি !
-আচ্ছা তুমি ওদের কি বলেছ ?
-কি বলবো ?
-না মানে একটা ছেলের
সাথে একই
রিক্সায় আসলে আবার
যাচ্ছ ! তাদের
মনে তো একটা কৌতুহল
আসতেই পারে !
তাদের কে কি বলেছ ?
-শুনুন কি বলেছি বা কি
বলবো সেটা
আমার ব্যাপার ! আপনি
আপনার টা
চিন্তা করেন । আপনার ঐ
পাড়ার
লোকদের ফোন দেন ।
সকাল বেলা না
আফসোস হচ্ছিল কেউ
দেখলো না !
এখন
দেখুক !
-সত্যিই ফোন দেবো ?
-দেন । আমারতো আর
ভয় নাই !
আমি একটু হাসলাম ।
বললাম
-না থাক ! কেউ দেখুক বা না
দেখুক,
কিছু যায় আসে না ! একই
সাথে
রিক্সায় চড়েছি এটাই বড়
কথা !
হঠাৎ নিশি রিক্সা দাড়াতে
বলল !
-কি হল ?
-কিছু না !
-তাহলেরিক্সা দাড়াতে
বললে
কেন ?
নিশি আমার দিকে
কিছুক্ষন তাকিয়ে
থেকে বলল
-এই জন্যই আপনার
এতো দিনে কোন
গার্লফ্রেন্ড হয় নাই !
-মানে কি ?
-মেয়েদের কিভাবে পটাতে
হয়
আপনার জানা নাই ! সকাল
বেলা যখন
সাহস করে হাত ধরেছিলেন
মনে
হয়েছিল নাহ, আমি যেই
রকম
ভেবেছিলাম আপনি সেই
রকম না !
কিন্তু এখন দেখছি সেই
রকমই ।
-মানে কি ?
-মানে বুঝেন না । এই
গরমের বেলায়
একটা মেয়ে আপনার সাথে
রিক্সায়
যাচ্ছে ! মেয়েটার গরম
লাগছে না ?
-আচ্ছা ! বাতাস করবো ?
গরম লাগছে ?
আমার কথায় নিশি বেশ
বিরক্ত হল !
কিছুক্ণ সরু চোখে তাকিয়ে
রইলো
আমার দিকে তারপর
চোখের ইশারায়
দেখিয়ে দিল । আমি ওর
চোখ ইশারার
দিকে তাকিয়ে দেখালাম
ওখানে
একটা একটা আইসক্রিমের
ভ্যান !
আমি মুহুর্তের ভিতরেই
বুঝে গেলাম
কি করতে হবে ।
আসলেই আমি একটা গাধা !
নিশিকে
তো আরো আগেই
আইসক্রিম
খাওয়ানোর দরকার ছিল ।
লাফ দিয়ে দুটো চকবার
কিনে আনলাম
।
যখন আমাদের রিক্সাটা
পাড়ার ভিতর
এসে ঢুকলো দেখলাম
মোড়ের কাছে
আমাদের এলাকার বেশ
কিছু
পোলাপাইন দাড়িয়ে আছে
। আমাকে
আর নিশিকে এক রিক্সায়
দেখে ওদের
চোখ বড় বড় হয়ে গেছিল !
ওদের সামনে
দিয়ে যখন আমাদের
রিক্সাটা
যাচ্ছিল আমার নিজের
কাছে তখন
মনে হচ্ছিল যে আমি এই
এলাকার
রাজা ! নিজের রানী কে
নিয়ে
রিক্সা ভ্রমনে বের হয়েছি
। মুখে একটা
বিজয়ীর হাসি ! আমার
প্রজা গুলো
আমাকে দেখে সালাম
ঠুকছে !
বাসার কাছে যখন রিক্সা
থেকে
নামলাম নিশি আমাকে
বলল
-আপনার আশা তো পুরন
হল ! সবাই তো
দেখলো ! এখন নিশ্চই
সবাইকে গিয়ে
গাল গল্প দিয়ে বেরাবেন !
-না ! না ! ছিঃ ! আমাকে
দেখে
তোমার এমন ছেলে মনে
হয় ?
-না্হ ! মনে হবে কেন !
আমি জানি !
শুনুন আমি আশা করবো
আপনি যা
বলবেন
সত্যটা বলবেন !
আমি বললাম
-আচ্ছা আমি সত্যটাই
বলবো !
নিশি আমার কথা শুনে
একটু খুশি হল মনে
হল ! বলল
-আপনি একটা কথা জানতে
চেয়েছিলেন না ?
-কোন টা ?
-ঐ যে আমার বান্ধবীদের
আপনাকে
নিয়ে আমি কি বলেছি ?
-হুম !
-এই নিন ! এই কাগজে
লেখা আছে !
নিশি আমার দিকে একটা
দুমড়ানো
কাগজ এগিয়ে দিয়েই
ভিতরে চলে
গেল । চলে গেল বললে ভুল
হবে ! দৌড়
দিল !
আমি কাগজটা খুলতেই
একটা ধাক্কার
মত খেলাম !
সেখানে কেবল একটা
শব্দই লেখা
ছিল !
"বয়ফ্রেন্ড" !!!
আমি তো পুরাই বেকুব হয়ে গেলাম....
দৌড়ে বাসায় ফিরলাম এবং আম্মুকে দিয়ে নিশিদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম....
ওরাও রাজি,,,
তবে বিয়েটা ও ডাক্তার হবার পর হবে....
সবার দাওয়াত রইল.....
আমার ও অপেক্ষা করতে কোন সমস্যা নেই....
------সমাপ্ত-----
আরো ভালোবাসার গল্প পেতে আমার টাইমলাইন ফলো করুন.....
ধন্যবাদ.....
নতুন নতুন ভালোবাসার গল্প পড়তে ভিজিট করুন
উত্তরমুছুনwww.valobasargolpo2.xyz
নতুন নতুন ভালোবাসার গল্প পড়তে ভিজিট করুন
উত্তরমুছুনwww.valobasargolpo2.xyz